বিশ্ব এখন অনেক ‘বেশি নিরাপদ’

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সব বোমার মা’

পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি গৃহীত হওয়ার ২৫ বছর পর বিশ্ব এখন বেশি নিরাপদ বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও উত্তর কোরিয়া এই চুক্তিতে সই করেনি ও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিশ্বশক্তিগুলোর নানা উদ্বেগ রয়েছে। খবর এএফপির।

জাতিসংঘের সংস্থা কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট-ব্যান ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিটিবিটিও) প্রধান রবার্ট ফ্লয়েড বলেন, ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে বিশ্বে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় আমেরিকানরা। তখন থেকে সর্বাত্মক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি সইয়ের আগপর্যন্ত বিশ্বে দুই হাজারের বেশি পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ওই চুক্তি আলোর মুখ দেখে।

খবরে বলা হয়, পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি সই হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র প্রায় এক ডজন পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষাগুলো চালিয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, উত্তর কোরিয়াসহ পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী আটটি দেশ এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এ অবস্থায় এটি কার্যকর করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া চাপ সৃষ্টি করার পরও দেশগুলো চুক্তিটি সই করবে, এমন লক্ষণ খুব কমই দেখা যাচ্ছে।

তা সত্ত্বেও রবার্ট ফ্লয়েড বলেন, ‘আমরা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো অবস্থায় আছি।’ ভিয়েনায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৬৩ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তা এ কথা বলেন।

১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে বিশ্বে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, উত্তর কোরিয়াসহ পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী আটটি দেশ এখনো এই চুক্তিতে সই করেনি।

ফ্লয়েড বলেন, এই নিষিদ্ধকরণ চুক্তি পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে একটি বৈশ্বিক নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে। চলতি শতকে একমাত্র যে দেশ এ পরীক্ষা চালিয়েছে সেটি হলো, উত্তর কোরিয়া।

পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা যাতে আর না হয়, সে লক্ষ্যে সিটিবিটিও বিশ্বজুড়ে তিন শতাধিক পর্যবেক্ষণ স্টেশন বসিয়েছে। কোথাও পরমাণু পরীক্ষা চালানো হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসব স্টেশনের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব।

ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপনসের (আইসিএএন) ফরাসি শাখার কর্মকর্তা জ্যঁ-মেরি কলিন বলেন, পরীক্ষা নিষিদ্ধ করে এই চুক্তি কার্যকর অর্থেই পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার থামাতে সক্ষম হয়েছে।

এ পর্যন্ত ১৭০টি দেশ এ চুক্তি অনুমোদন করেছে। তবে আরও অনেকের মতো মিসর, ভারত, ইরান, পাকিস্তান, চীন, উত্তর কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এতে সই করেনি।

ফ্লয়েড বলেন, তিনি চাচ্ছিলেন চুক্তিতে স্বাক্ষর না করা দেশগুলোর সঙ্গে একটা আলাপ-আলোচনা শুরু করতে। যাতে এমন একটি পথ খুঁজে পাওয়া যায়, যে পথ ধরে দেশগুলো ওই চুক্তিকে অনুমোদন করবে। এর মধ্য দিয়ে সব মানুষের স্বার্থে আইনগতভাবে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ করা সম্ভব হবে।

রাশিয়ার ‘সব বোমার বাবা’

ওই চুক্তি নিয়ে এসব দেশের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অচলাবস্থা কীভাবে কাটানো সম্ভব, সে বিষয়ে ফ্লয়েড বিস্তারিত কিছু জানাননি।
খবরে বলা হয়, নিষিদ্ধকরণ চুক্তিটি কার্যকর করা গেলে সিটিবিটিও পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শন করার ক্ষমতা পাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বেলায় বলা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পর থেকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওই চুক্তিতে সই করার প্রস্তাব কংগ্রেসে পাঠানোর সাহস দেখাননি। কারণ, রিপাবলিকানরা খোলাখুলি এ চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চের কর্মকর্তা এমানুয়েল মৈত্রে এ কথা জানান।

আবার চুক্তি সই করা নিয়ে চীনের অবস্থান হলো, তারা ওয়াশিংটনের জন্য অপেক্ষা করছে। মৈত্রে বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সিটিবিটিওতে যোগ না দেয়, তবে উত্তর কোরিয়াকে এতে যোগদান করানো কঠিন হবে।

তবে আশার কথা হলো, পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ-সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের আরেক চুক্তি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। চুক্তিটির অধীন, এতে সই করা ৫৪টি দেশ পরমাণু অস্ত্র তৈরি, এমন অস্ত্র নিজের অধিকারে রাখা, এমনকি পরমাণু বোমা তৈরির যন্ত্রপাতি আয়ত্তে রাখতে পারবে না।