মন্ত্রিসভা গঠন করলেন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা
ছবি: রয়টার্স

জাপানের সংসদ ইয়োশিহিদে সুগাকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে। তাঁর এই নির্বাচন ছিল প্রত্যাশিত এবং প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন মন্ত্রিসভাতেও খুব বেশি রদবদল তিনি ঘটাননি। সংসদের উভয় কক্ষ বুধবার বিপুল সংখ্যাধিক্য ভোটে সুগাকে নতুন সরকার প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছে।

এর আগে কয়েক দিন ধরে চলা দেন-দরবারে জাপানের প্রধান ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দল এল ডি পি-এর সাতটি উপদলের মধ্যে পাঁচটি সুগাকে সমর্থন দেওয়ায় তাঁর ভাগ্য তখনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ফলে আজ বুধবারের নির্বাচন ছিল অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে গতকাল দলের প্রধান পদগুলোর জন্য নতুন নির্বাহী ঠিক করে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, আনুগত্যের পুরস্কার প্রদানের বাইরে তিনি হাঁটবেন না। নিজের মন্ত্রিসভা গঠনের বেলায়ও একই অবস্থান দৃশ্যমান ছিল। দলীয় সভাপতি নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কোনো প্রার্থী কিংবা তাদের সমর্থকদের সুগার নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি।

নিজের আগের পদ চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি হিসেবে তিনি আবে মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাৎসুনোবু কাতোকে বেছে নিয়েছেন। এর বাইরে অল্প যে দু-একটি প্রধান পদে সুগা রদবদল এনেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে তারো কোনোকে সরিয়ে শিনজো আবের ভাই নোবুও কিশিকে তিনি সেই পদে নিয়োগ দিয়েছেন এবং কোনো পেয়েছেন প্রশাসনিক ও নিয়ন্ত্রণ সংস্কার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে স্বপদে বহাল আছেন অর্থমন্ত্রী তারো আসো, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগি, অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী হিরোশি কাজিইয়ামা এবং পরিবেশমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি।

নতুন সরকার প্রধান নির্বাচিত হয়ে সুগা বলেছেন, করোনাভাইরাস সামাল দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিকে সজীব করে তোলা হবে তার প্রাথমিক দায়িত্ব। নীতিগত অবস্থান থেকে আবের অনুসৃত পথ ধরে রাখার আভাস তিনি দিয়েছেন। মন্ত্রিসভায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও অনেকেই মনে করছেন নিজের পদে থিতু হয়ে বসার পর কিছুটা রদবদল তিনি হয়তো আনতে পারেন। তবে এর সবটাই নির্ভর করবে উপদলীয় বিভাজনের দিক থেকে ভারসাম্যগত অবস্থান অনুকূলে থাকার ওপর।

এল ডি পি-এর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কয়েকজন অবশ্য চলতি বছরের মধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ডাকার পক্ষপাতী। অর্থমন্ত্রী তারো আসো যেমন বলেছেন, স্থগিত হয়ে যাওয়া ২০২০ টোকিও অলিম্পিক আগামী বছর অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচনের আয়োজনকে তা বিঘ্নিত করতে পারে। ফলে তিনি চাইছেন এ বছরের শেষদিকে যেন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে অন্যরা মনে করছেন করোনাভাইরাস সামাল দেওয়া নিয়ে সরকারের অবস্থান খুব বেশি পোক্ত না হওয়ায় আগাম নির্বাচন ডাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

এ দিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে বুধবার সকালে আবের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে প্রায় আট বছর ধরে তাঁকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য জাপানের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, কঠিন এক সময়ে সংকট উত্তরণে দেশকে সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা তিনি করে গেছেন এবং সেই প্রক্রিয়ায় জন সমর্থন ছিল তার জন্য সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিলেও সংসদ সদস্য থেকে যাওয়ার উল্লেখ করে আবে তার সমাপনী বিবৃতিতে আরও বলেছেন যে একজন আইন প্রণেতা হিসেবে উত্তরসূরি সুগাকে তিনি সমর্থন দিয়ে যাবেন।