মিয়ানমারের জঙ্গলে জান্তাবিরোধীদের সামরিক প্রশিক্ষণ

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন দেশটির সেনা অভ্যুত্থানবিরোধীরা
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাজপথে গুলি করে গণতন্ত্রপন্থীদের হত্যা করছে। বিক্ষোভ দমনে তারা নিজ দেশের জনগণের দিকে তাক করে রেখেছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র। যখন-তখন বাড়িতে হানা দিয়ে তারা নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আত্মরক্ষার জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন দেশটির সেনাশাসনবিরোধী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। আজ বুধবার সিএনএন অনলাইনের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাজপথে নামে জনগণ। বিক্ষোভকারীদের দমনে সহিংস পথ বেছে নেয় দেশটির সামরিক জান্তা। সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমারের অনেক মানুষ শহর-নগর ছেড়ে পালিয়ে দেশটির সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। এই দলে সেনাশাসনবিরোধী সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্স মুভমেন্টের (সিডিএম) সদস্যরা রয়েছেন।

সিডিএমের সদস্যদের মধ্যে আছেন চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মী, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ছাত্র ও শ্রমিক। সিডিএমের অনেক সদস্য সেনাশাসনের প্রতিবাদে তাঁদের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।

সিডিএমের সদস্যরা মিয়ানমারের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত সীমান্ত অঞ্চলের জঙ্গলে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁরা মূলত নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য কৌশল শিখতেই এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।

সিডিএমের সদস্যরা দেশটির সীমান্তের যেসব এলাকায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, সে এলাকাগুলো বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সামরিক শাখা সিডিএমের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে এগিয়ে এসেছে।

কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) সশস্ত্র শাখা কারেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অর্গানাইজেশন (কেএনডিও)। কেএনডিওর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল নেরদা বো মায়া। তিনি সিডিএমের একদল সদস্যের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্পর্কে মেজর জেনারেল নেরদা বলেন, জীবন রক্ষা করা তাঁদের দায়িত্ব। তাঁরা যদি এই লোকজনকে প্রশিক্ষণ না দেন, তাহলে তাঁদের কে রক্ষা করবে?

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস দমন–পীড়ন বাড়িয়েই চলছে। এখন পর্যন্ত তাদের হাতে ৭৬০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পর্যবেক্ষণ সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স।

প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। সহিংসতায় অনেকেই আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে হাজারো মানুষকে।

মেজর জেনারেল নেরদা বলেন, তিনি প্রায় ২০০ অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনও আগে কখনো বন্দুক হাতে নেননি। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র। তাদের বয়স অল্প। এ দলে আরও আছে নার্স, চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী।

সামরিক প্রশিক্ষণের অংশ হিসেব অভ্যুত্থানবিরোধীদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। তাঁদের নানা কৌশল শেখানো হচ্ছে। সমরবিদ্যার মৌলিক চিহ্ন ও জ্ঞান শেখানো হচ্ছে।

সিডিএমের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ শুধু কেএনডিও দিচ্ছে না। অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীও তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক এলাকা থেকে এমন সামরিক প্রশিক্ষণের একাধিক ভিডিও ফুটেজ পেয়েছে সিএনএন। এসব ফুটেজে দেখা যায়, প্রশিক্ষণার্থীরা সামরিক কায়দায় নানা প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। অস্ত্র চালানো শিখছেন। এমনকি তাঁরা অ্যাম্বুশের (অতর্কিত হামলা) মতো প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন।

ফুটেজে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণার্থীরা নানা স্লোগান দিচ্ছেন। এসব স্লোগানের মধ্যে রয়েছে ‘জনগণের জন্য’, ‘মুক্তির জন্য’, ‘স্বাধীনতার জন্য’।

সীমান্তে সেনাশাসনবিরোধী সামরিক প্রশিক্ষণের ক্যাম্পের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিএনএন মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি।