মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে ২০ পুলিশ নিহত

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার হাত থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) গঠন করা হয়েছে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের পূর্ব সীমান্তে গতকাল রোববার জান্তাবিরোধী বেসামরিক যোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে দেশটির অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। জান্তাবিরোধী যোদ্ধারা এই দাবি করেছেন। আজ সোমবার দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের নিয়ে গঠিত ছায়া সরকারের পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) দাবি, শান রাজ্যের একটি শহরে তাদের যোদ্ধাদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া শহরের একটি পুলিশ স্টেশন তারা দখল করেন নেয়।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ছায়া সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, তারা পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) গঠন করেছে। সামরিক জান্তার হাত থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে তারা এই বাহিনী গঠন করেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, জান্তাবিরোধী যোদ্ধাদের দখলে নেওয়া পুলিশ স্টেশনটি পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্যকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছেন জান্তাবিরোধী যোদ্ধারা।

এ ঘটনার একাধিক ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে নিরাপত্তা বাহিনীর উর্দি পরা সদস্যদের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
আগুন ধরিয়ে দেওয়া পুলিশ স্টেশন ও পুলিশের একটি যানবাহন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা গেছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন ছবিতে চারজন আটক ব্যক্তিকে দেখা যায়, যাঁদের পুলিশ সদস্য বলা হচ্ছে। তাঁদের সবার হাত পেছনের দিকে থাকতে দেখা যায়। আর সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়ে তাঁদের চোখ বাঁধা ছিল।

শান রাজ্যের যে শহরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে বলা হচ্ছে, সেটি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এলাকাটি কিছু সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীনিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের কাছেই অবস্থিত। এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য কয়েক দশক ধরে লড়াই করে আসছে।

পিডিএফের সদস্য থেট ওয়াই বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তিনি মনে করেন, এটি এক বিজয়ের দিন। তবে তিনি উদ্বিগ্নও বটে। কারণ, তাঁরা জান্তার বিমান হামলা ও ট্যাংক দেখেছেন। তাঁদের চেয়ে জান্তার কাছে অনেক উন্নত অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এই সংঘর্ষের বিষয়ে জান্তার মুখপাত্রের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কিন্তু বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

মিয়ানমারে গত বছরের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা অভিমত দেয়। তবে এই নির্বাচনে কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ আনে দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর এই অভিযোগ নাকচ করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে কথিত জালিয়াতির অজুহাত তুলে দেশটির সেনাবাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে সু চিসহ দেশটির বেসামরিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে।

সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সেনাশাসনবিরোধী এই বিক্ষোভে জান্তার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত আট শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এ ছাড়া হাজারো বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।