মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১০ লাখের ওপর: জাতিসংঘ

জান্তা সরকারের অভ্যুত্থানের পর থেকে বিক্ষোভ চলছে মিয়ানমারে।
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সহিংসতার জেরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এতে প্রথমবারের মতো দেশটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ইউএনওসিএইচএ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, বর্ষা ঘনিয়ে আসার পাশাপাশি যুদ্ধের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। খবর এএফপির

গত বছর মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতাসীন অং সান সু চির এনএলডি সরকার উৎখাত করে সেনাবাহিনী। এনএলডি নেত্রী অং সান সু চিসহ তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে দেশটির সাত লাখের বেশি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বেসামরিক মিলিশিয়ারা যুদ্ধ শুরু করে এবং জান্তার পক্ষ থেকে পাল্টা আক্রমণ করা হয়। অধিকার গ্রুপগুলোর দাবি, দেশটির জান্তা বিভিন্ন গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বেসামরিক লোকজনের ওপর বিমান হামলা করেছে।

অভ্যুত্থানের আগেই বাস্তুচ্যুত লোকজনের সঙ্গে নতুন করে সহিংসতার ঘটনায় আরও ৩ লাখ ৪৬ হাজার বাস্তুচ্যুত যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ড ও চীন সীমান্তে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এবং ২০১৭ সালে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।

ইউএনওসিএইচএ বলছে, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় ১২ হাজার বেশি বেসামরিক সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়া বা নষ্ট করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসন্ন হওয়ায় আশ্রয়শিবিরে থাকা এসব মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে ইউএনওসিএইচএ।

দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের স্যাগাইন অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে তিন লাখ বাসিন্দা। সেখানে প্রায়ই জান্তার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কর্তৃপক্ষ স্যাগাইন ও পার্শ্ববর্তী ম্যাগওয়ে শহরে মুঠোফোন সেবা, খাবার, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, ওই অঞ্চলগুলোয় স্বাস্থ্য পরিষেবা, খাদ্য, ত্রাণসামগ্রী ও আশ্রয় জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে সংকট নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জান্তা সেখানে মানবিক সহায়তা প্রস্তাবে রাজি নয়।

স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, অভ্যুত্থান–পরবতী সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ জন নিহত ও ১৩ হাজার বেশি ব্যক্তিকে আটক করেছে জান্তা।