মুক্তি পেলেন প্রিন্স তালাল

আল-ওয়ালিদ বিন তালাল
আল-ওয়ালিদ বিন তালাল

দুর্নীতির অভিযোগে দুই মাসের বেশি আটক থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন সৌদি আরবের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালাল (৬২)। গতকাল শনিবার তিনি রাজধানী রিয়াদের নিজ বাসভবনে যান। তালালের পারিবারিক সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।

সৌদি আরবে সম্প্রতি রাজপরিবারের সদস্য, দেশটির মন্ত্রী ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রিন্স তালালও ছিলেন।

মুক্তির কয়েক ঘণ্টা আগে রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দেন তালাল। এতে তিনি বলেছিলেন, তিনি শিগগিরই মুক্তি পাওয়ার আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো অভিযোগ নেই। আমার সঙ্গে সরকারের কিছু আলোচনা হয়েছে।’

প্রিন্স তালালের মুক্তির শর্ত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। এমনকি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া যায়নি সরকারি কোনো কর্তাব্যক্তির বক্তব্য।

তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে ক্ষমতা আরও সুসংহত করতে বাদশাহের ছেলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমান ছঁক আকেন। সে অনুযায়ী গ্রহণ করা হয় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। এতে গত নভেম্বর থেকে রাজপরিবারের একাধিক সদস্য, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী এবং দেশটির শীর্ষ ব্যবসায়ীদের আটক করে বিলাসবহুল হোটেল রিটস কার্লটনে রাখা হয়।

 ওই ধরপাকড় অভিযানের সবচেয়ে বড় টার্গেট ছিলেন প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালাল। তাঁকে বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী মার্কিন ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে তুলনা করা হয়। বলা হয়, সৌদি আরবের ওয়ারেন বাফেট।

সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেশির ভাগ বন্দীই অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পেতে রাজি হয়েছেন, যা অর্থের হিসাবে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সমান। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে গত বুধবার সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মেদ আল-জাদান বলেন, বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে পাওয়া অর্থ চলতি মাসে বাদশাহ সালমানের ঘোষণা করা কোটি কোটি ডলারের প্যাকেজের অর্থায়নে কাজ দেবে।

নভেম্বরে আটকের পর এই প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎকার দিলেন প্রিন্স তালাল। রয়টার্সকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বরাবরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন তিনি। তালাল প্রত্যাশা করছেন, সরকারের কাছে নিজের সম্পদ ছেড়ে দেওয়া ছাড়াই তিনি তাঁর বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কিংডম হোল্ডিং কোম্পানিতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবেন।

মুক্তি পেলেন আরব স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মালিক

এএফপির খবরে বলা হয়, তালালের মুক্তির আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার মুক্তি দেওয়া হয় প্রভাবশালী আরব স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এমবিসির মালিক ওয়ালিদ আল-ইব্রাহিমকে। তিনিও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিন মাস পর ছাড়া পেলেন।

৪ নভেম্বর শুরু হওয়া ধরপাকড় অভিযানে প্রায় সাড়ে ৩০০ মানুষকে আটক করা হয়। এখন দেশটিতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মাত্রা অনেকটাই কমে এসেছে।

মুক্তির পর ইব্রাহিম তাঁর বাসভবনে পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এমবিসির তিন কর্মী নাম না প্রকাশের শর্তে তা জানিয়েছেন।

এমবিসির মালিক ইব্রাহিমের মুক্তির শর্তাবলি জানা যায়নি। কিন্তু সরকার জানিয়েছে, অর্থের বিনিময়ে মুক্তি পেতে রাজি হয়েছেন বেশির ভাগ বন্দী। ইব্রাহিমের মুক্তির আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, মুক্তি পাওয়ার জন্য ইব্রাহিমকে এমবিসির নিয়ন্ত্রণ সরকারি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ভাষ্য জানা যায়নি।

 সৌদি আরব সরকার শুক্রবার ইব্রাহিম ছাড়াও মুক্তি দিয়েছে সৌদির রাজকীয় আদালতের সাবেক প্রধান খালেদ তুওয়াইজরি ও আবহাওয়া অফিসের সাবেক প্রধান তুর্কি বিন নাসেরকে। সরকারের কাছের এক সূত্র তা জানিয়েছে।

বিগত কয়েক সপ্তাহে সৌদি সরকার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ছেড়ে দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল গার্ডের সাবেক প্রধান প্রিন্স মিতেব বিন আবদুল্লাহ। ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তাঁকে মুক্তি দিতে রাজি হয় সরকার।