রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে সন্দিহান জান্তাপ্রধান

রোহিঙ্গা রয়টার্স ফাইল ছবি

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার বিষয়ে সন্দিহান মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম তিনি কোনো গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন। এ নিয়ে প্রতিবেদন করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

চীনা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল ফিনিক্স এই সাক্ষাৎকার নেয়। মিন অং হ্লাইংয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ২০১৭ সালের অভিযানে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের আবারও রাখাইন রাজ্যে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের আইনের সঙ্গে যদি সংগতিপূর্ণ না হয়, তাহলে এখানে বিবেচনার কী আছে? আমি মনে করি না পৃথিবীতে কোনো দেশ আছে, যারা নিজেদের শরণার্থী আইনের বাইরে গিয়ে শরণার্থীদের ঠাঁই দেয়।’

রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানের কোনো কার্যকারিতা কি নেই, জানতে চাইলে মিন অং হ্লাইং মাথা নাড়ান।

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি চৌকিতে হামলা হয়। এর জের ধরে সেখানে সহিংস অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশ। গুলি-আগুনে নিহত হয় হাজারো রোহিঙ্গা। অভিযানের মুখে প্রাণভয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। তখন সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন মিন অং হ্লাইং। সাক্ষাৎকারে তিনি আবারও দাবি করেছেন, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা কোনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়। তাঁর ভাষ্যমতে, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতালাভের পরই রোহিঙ্গাদের উত্থান।

মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা অর্জনের পর আদমশুমারিতে ‘বাঙালি’, ‘পাকিস্তানি’, ‘চট্টগ্রাম’ শব্দ নিবন্ধন করা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা বলতে কোনো শব্দ ছিল না। তাই আমরা এটি কখনো গ্রহণ করিনি।’

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে মনে করে। তাদের মতে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা বহিরাগত। যদিও অনেক রোহিঙ্গাই শত বছর ধরে সেখানে বসবাস করছে।

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং
ফাইল ছবি: এএফপি

রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সমর্থনের অভিযোগে তৎকালীন স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিও আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তবে সু চি ও দেশটির সেনাবাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান চালালে শরণার্থীরা বাংলাদেশে পালায়।

সামরিক অভ্যুত্থানের অল্প সময় পরেই মিন অং হ্লাইং দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। কিন্তু জান্তা সরকারের এই কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকা জান্তা সরকারের আমলে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে নেয় জান্তা। আটক করা হয় স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর থেকেই জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো মিয়ানমার। বিক্ষোভকারীদের দাবি সুস্পষ্ট, সেনাশাসন প্রত্যাহার এবং সু চিসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি।