শ্রীলঙ্কায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, পাশে আছে চীন

চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার ডোজ নিচ্ছেন এক নারী। শ্রীলঙ্কা, কলম্বো, ১৬ মে
ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ এশিয়া। এ অঞ্চলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভারত। এ ছাড়া ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। এমন একটি দেশ হলো শ্রীলঙ্কা।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কয়েক দিন ধরে দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় তিন হাজার, যা এক মাস আগের তুলনায় এক হাজার শতাংশ বেশি।
শ্রীলঙ্কায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ নিচ্ছে চীন। করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে চীন।

করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় আবারও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বলা হচ্ছে, আজ শুক্রবার থেকে দেশটির শহরের রাস্তাগুলো আবারও নীরব হয়ে যাবে। কারণ, আজ থেকে শ্রীলঙ্কাবাসীরা অত্যাবশ্যকীয় কাজ ছাড়া বাইরে যেতে পারবে না। এ নির্দেশ জারি থাকবে ২৫ মে পর্যন্ত।

শ্রীলঙ্কায় করোনাভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ গত এপ্রিলে প্রথম ভাগে এক থেকে দুই শর মধ্যে নেমে এসেছিল। কিন্তু এপ্রিলের শেষের দিকে এ সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকে। গত ১৯ মে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৬২৩ জন, যা দেশটিতে মহামারি আঘাত হানার পর সর্বোচ্চ। করোনার সার্বক্ষণিত তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুসারে, দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ১ হাজার ৮৯ জন।

শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় কিছুটা ভালো। অনেকাংশেই বিনা মূল্যে দেশটিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় এবং প্রায় সবাই এ সেবা পেয়ে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি যেভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে এ সেবাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শ্রীলঙ্কার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শশিকা বান্দ্রা বিবিসিকে বলেন, ‘এ মহামারির প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের কম। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ততক্ষণই দুর্দান্ত থাকবে, যতক্ষণ এ মহামারির প্রাদুর্ভাব বাড়বে না এবং এ ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে না।’

যদিও লঙ্কান সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নয় সরকার। যথেষ্ট পরিমাণ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সরকার সমালোচনার মুখে। এ ছাড়া করোনার নতুন কোন কোন ভেরিয়েন্ট দেশটিতে ছড়িয়েছে, তা–ও ঠিকঠাক জানা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে যুক্তরাজ্যের ভেরিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। তবে দেশটির ইনস্টিটিউট ফর হেলথ পলিসির নির্বাহী পরিচালক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বরি রান্নান-এলিয়া বলেন, গত এপ্রিলের শেষ দিক থেকে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বি.১.৬১৭.২ দেশটিতে সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ।

এ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে চীন। দেশটিকে টিকা, পিপিই, মাস্ক, করোনা পরীক্ষার কিট দিয়ে সাহায্য করছে চীন। চীনের এ কূটনীতির নাম দেওয়া হচ্ছে ‘ফেস মাস্ক’ কূটনীতি। শ্রীলঙ্কাকে সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে চীন। বরি রান্নান-এলিয়া বলেন, শ্রীলঙ্কার পাশে এখন চীনকে দরকার। এটা শুধু এ কারণে নয় যে তারা করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেছে। চীন সফলভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা করেছে, এ জন্যই দেশটিকে শ্রীলঙ্কার পাশে দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।