সারা গ্রামে একলা একজনা

চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রামে এক ব্যক্তি একাই বাস করেন। বছর দশেক ধরে এভাবেই থাকছেন লিউ শেংজিয়া নামের সেই ব্যক্তি।
১০ বছর ধরে পুরো গ্রামে একাই থাকছেন। ওই তল্লাটে বুনো কুকুরের ডাক ছাড়া অন্য কিছুর সাড়া মিলবে না। শুধু মা আর ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার কারণে গানসু প্রদেশের প্রত্যন্ত জুয়েনসানসে গ্রামে এমন নিঃসঙ্গ জীবন বেছে নিয়েছেন লিউ।

দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১০ বছর আগেও চীনের জুয়েনসানসে গ্রামে অনেক মানুষের বাস ছিল। হঠাৎ করেই একবার ওই গ্রামে প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি দেখা দেয়। খাদ্যের অভাবে হাজরো মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসে গ্রাম। যেসব বৃদ্ধ গ্রাম ছেড়ে যেতে পারেননি, তাঁরাও ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। এ সময় লিউয়ের মা শয্যাশায়ী ছিলেন। এ কারণে তাঁকে নিয়ে অন্য কোথাও যেতে পারেননি লিউ ও তাঁর ছোট ভাই। বাধ্য হয়ে শুধু ওই তিনজনই থেকে যান পুরো গ্রামে। কোনো রকমে এক-আধবেলা খাবার জোগাড় করে অসুস্থ মাকে খাইয়েছেন দুই ভাই। খেয়ে না খেয়ে মায়ের সেবা-যত্ন করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১০ বছর আগে একদিন লিউয়ের মা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। খাদ্যের অভাবে মারা যায় তাঁর ছোট ভাই। এরপর একদম একলা হয়ে পড়েন লিউ। একবার ভেবেছিলেন, আর কী! এবার অন্য কোথাও গিয়ে একটু স্বস্তিতে বাস করবেন। বাবা-মায়ের ভিটে এই গ্রাম। গ্রামের বাতাসে বাতাসে মায়ের ঘ্রাণ, এই মাটি ছুঁয়ে আছে মায়ের পদচিহ্ন। কী করে এসব ছেড়ে যাবেন! এসব ভাবতেই বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে লিউয়ের। তাই পরক্ষণেই আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি। বেছে নেন একলা জীবন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত জুয়েনসানসে গ্রামে জনসংখ্যা হচ্ছে একজন। পুরো গ্রামটি এখন ধ্বংসস্তূপ। আর মাঝে কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে লিউয়ের ঘর।

নিজের এই একলা থাকার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিউ শেংজিয়া বলেন, ‘শুরুতে রাতে ঘুমোতে পারিনি। রাতের বেলা বুনো কুকুরের হিংস্র ডাক শুনলেই ভয়ে দুচোখের পাতা এক করতে পারতাম না। এই ভয় কাটাতে একদিন সঙ্গী হিসেবে ভেড়া পোষা শুরু করলাম। দিনের পর দিন এভাবে একা থাকতে থাকতে এখন এই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি।’
বর্তমানে ওই গ্রামের স্থানীয় বন বিভাগে বন পরিদর্শক হিসেবে কাজ করেন লিউ। পুরো মাস কাজ করে জোটে ৮ হাজার ৪৫৫ টাকা (৭০০ ইউয়ান)। এখনো তাঁকে বহুদূর হাঁটাপথ গিয়ে খাবার ও পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয়।

এখন তো চাইলে এই জনহীন গ্রাম থেকে অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন—এমন প্রশ্নের জবাবে লিউ বলেন, এখানে টিকে থাকাটা এখন তাঁর জন্য কোনো সমস্যাই নয়। তবে এখনো মাঝেমধ্যে কোথাও মানুষের মাঝে গিয়ে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে তাঁর। কিন্তু এই জনহীন গ্রামের বাতাসে যে জননীর ঘ্রাণ, মাটিতে মায়ের পায়ের চিহ্ন!
