স্টার ওয়ারসের 'লেজার একে-৪৭' আনছে চীন

কল্পকাহিনিভিত্তিক  সিনেমাগুলোতে ব্যবহৃত হয়, এমন বিধ্বংসী ‘লেজার গান’ বাস্তবে আনছে চীন। হাতে ধরা এ বন্দুকগুলো যে আলোর রশ্মি উৎপন্ন করে তা খালি চোখে দেখা যায় না। বন্দুকগুলো এমনই বিধ্বংসী যে মানুষের শরীরের হাড়-মাংস গলিয়ে ফেলতে সক্ষম। প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমৃদ্ধ এই ‘লেজার গান’। এ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট চীনা বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা এমনটাই জানিয়েছেন।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, হলিউডের কল্পকাহিনিভিত্তিক সিনেমা স্টার ওয়ারসের বিধ্বংসী বন্দুক বাস্তবে নিয়ে আসছে চীন। তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমৃদ্ধ এ বন্দুককে বলা হচ্ছে জেডকেজেডএম-৫০০ লেজার অ্যাসল্ট রাইফেল। হাতে ধরা এ বন্দুকগুলোর রশ্মি কঠিন ধাতু নির্মিত জানালার মধ্য দিয়েও যেতে পারে। অস্ত্রটিকে শক্তি জোগাবে বিশেষভাবে তৈরি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি; যা সাধারণ গুলি চেয়ে অনেকটাই হালকা। একটি ব্যাটারি থেকে প্রায় এক হাজার বার হামলা করা যাবে। ট্যাংক, বিমান ও জাহাজ থেকেও ব্যবহার করা যাবে এই অত্যাধুনিক অস্ত্রটি। একটি বন্দুকের দাম পড়বে প্রায় ১৫ হাজার মার্কিন ডলার।

খবরে বলা হয়েছে, কারও গায়ের পোশাক যদি দাহ্য হয়, তবে এ বন্দুকের গুলিতে ওই ব্যক্তির পুরো শরীরে আগুন ধরে যাবে। তিন কেজি ওজনের বন্দুকটি অনেকটা একে-৪৭ রাইফেলের মতোই। লিথেনিয়াম ব্যাটারিচালিত বন্দুকগুলো চার্জ দিয়ে চালানো যায়। একবার চার্জ দেওয়া হলে চালানো যায় এক হাজার বার। প্রতি দুই সেকেন্ড একবার ফায়ার করা যায় বন্দুকগুলো।

লক্ষ্যভেদ নির্ভুল করতে ট্যাংক, গাড়ি, নৌকা এবং বিমানে বসানো যাবে এ লেজার গান। চীন এ বন্দুকটি জঙ্গি দমন অভিযানে ব্যবহার করবে। চীনের সশস্ত্র বাহিনী চায়নিজ আর্মড পুলিশ প্রথম এ বন্দুক ব্যবহার করবে বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসী হামলার ক্ষেত্রে জিম্মি করার মতো ঘটনায় এ বন্দুক ব্যবহার করা হবে। কারণ, এর রশ্মি কঠিন ধাতু নির্মিত জানালার মধ্য দিয়েও ফুঁড়ে বের হয়ে যেতে পারে।

দেশটির শানঝি প্রদেশের চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সের শিয়ান ইনস্টিটিউট অব অপটিকস অ্যান্ড প্রেসিশন মেকানিকসের অধীনে গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পের এক গবেষক বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ওপর এ বন্দুক ব্যবহার করা হলে যন্ত্রণা হবে অসহ্য।’ বাজারে ছাড়ার লক্ষ্যে এ বন্দুক এখন ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে।

এএফপির খবরে বলা হয়, এর ব্যথা অসহ্য হওয়ায় এটিকে ‘অমানবিক’ অস্ত্র বলা হয়। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুয়ায়ী এ মারণাস্ত্র আধুনিকায়নের অনুমতি নেই। তবে এ প্রকল্পের জন্য ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি ‘প্রাণঘাতী মারণাস্ত্র’ নয়।

বেইজিংয়ের চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস লেজার ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ওয়াং ঝিম্যান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটছে। মোবাইল ফোন নির্মাতারা যেভাবে কাজ করে চলেছেন, সেভাবে বিজ্ঞানীরাও ছোট এবং বড় বা শক্তিশালী ডিভাইসগুলো বিকশিত করতে সক্ষম হচ্ছেন। তিনি বলেন, এটি আর বৈজ্ঞানিক কল্পসাহিত্য নয়। এটি এখন ইতিমধ্যেই জীবনের জন্য সত্য বলে পরিণত হয়েছে।
তবে ‘লেজার গান’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ওয়াং সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এমন অস্ত্র তৈরি হতে থাকলে বিশ্বের সব দেশের জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করবে।

চীনের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, কোনো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মিছিল বা প্রতিবাদের সময় আশপাশে এ অস্ত্র থাকলে অনেকেই ভয় পাবেন।