থাইল্যান্ডের কারাগারে অনশনে থাকা তরুণীর মৃত্যু

থাইল্যান্ডে ২০২০ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় ‘ব্যাড স্টুডেন্টস’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে নেতিপর্ন ‘বাং’ সানেসাংখোম (মাঝে)ফাইল ছবি: রয়টার্স

থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রকে অবমাননার অভিযোগ গ্রেপ্তার এক নারী অধিকারকর্মীর কারাগারে মৃত্যু হয়েছে। তিনি কারাগারেই অনশন করছিলেন। আজ মঙ্গলবার সকালে ‘হঠাৎ হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে’ তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ওই কারাবন্দীর নাম নেতিপর্ন ‘বাং’ সানেসাংখোম। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণী থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রপন্থী একটি ছোট সংগঠনের সদস্য ছিলেন। গত ২৬ জানুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ভিন্ন সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি অভিযোগ ছিল থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রকে অবমাননা করার।

গ্রেপ্তারের পরদিন থেকেই সানেসাংখোম অনশন শুরু করেন। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে শুধু একবার পানি খেয়েছিলেন তিনি। আর এপ্রিল থেকে খাবার খাওয়া শুরু করেছিলেন। থাইল্যান্ডের বিচারব্যবস্থায় সংস্কার আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন সানেসাংখোম।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সানেসাংখোমকে প্রাথমিকভাবে আদালত অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে রাজতন্ত্র অবমাননার অভিযোগে করা আলাদা একটি মামলায় জামিন বাতিলের পর তাঁর বন্দী থাকার সময় বেড়ে যায়।

সানেসাংখোম আগে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বাবা পেশায় একজন বিচারক। সানেসাংখোমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো আদালতে প্রমাণিত হলে প্রতিটির জন্য আলাদভাবে তাঁর সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা হতে পারত।

থাইল্যান্ডে আইনি সহায়তা দেওয়া প্রতিষ্ঠান থাই লয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মতো এত কঠিন রাজতন্ত্র অবমাননা আইন বিশ্ব খুব কমই আছে। এ আইনের অধীন ২০২০ সাল থেকে দেশটিতে প্রায় ২৬০টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

সানেসাংখোমকে এবারই প্রথম আটক করা হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। ২০২২ সালেও গণতন্ত্রপন্থী সংগঠন ‘থালুওয়াংয়ের’ এক সদস্যসহ তাঁকে আটক করা হয়েছিল। সেবার টানা ৬৪ দিন কোনো খাবার খাননি তাঁরা। দুই মাসের বেশি সময় টানা অনশনের পর তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

তবে এবার ঠিক কত দিন সানেসাংখোম খাবার খাননি, তা স্পষ্ট নয়। থাই লয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্যমতে, অনশনের মধ্যে গত এপ্রিল থেকে তিনি খাবার খাওয়া শুরু করেন। স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় তাঁকে কারাগারের হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছিল।

কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনশনের কারণে সানেসাংখোমের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তিনি রক্তস্বল্পতায় ভুগছিলেন। তবে থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনস এক বিবৃতিতে বলছে, তাঁকে ভিটামিন ও ইলেকট্রোলাইটস (শক্তিবর্ধক পানীয়) খেতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এ অবস্থা আজ সকালে তার ‘হৃৎপিণ্ড হঠাৎ বন্ধ’ হয়ে যায়।