মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে জবাবদিহির মুখোমুখি করার আহ্বান

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের ন্যায়বিচার চেয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে এ ঘটনার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়েছে। পৃথক বিবৃতিতে গতকাল বুধবার এ দাবি জানিয়েছে সংস্থা দুটি।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের পাঁচ বছর পূরণ হয়েছে আজ ২৫ আগস্ট। ২০১৭ সালের এই দিনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন করা শুরু হয়। এ উপলক্ষে বিবৃতি দুটি দিয়েছে এইচআরডব্লিউ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এইচআরডব্লিউ বলছে, পাঁচ বছর আগে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা শুরু হয়। চলে ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ। এর জেরে সে সময় ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। নির্যাতনের মুখে এখনো প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে অবস্থান করছে। এ ঘটনার পাঁচ বছর গড়িয়ে গেলেও ন্যায়বিচার পায়নি তারা। এমনকি তাদের অধিকারও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করা হয়েছে, তার জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে দায়ী করা হয়নি। ওই ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহির মুখোমুখি করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ এই অঞ্চলে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে, তাদের জন্য ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হবে।

দাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এলাইন পিয়ারসন বলেন, মুক্ত ও স্বনির্ভর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে রোহিঙ্গারা যেন স্বাধীন ও নিরাপদভাবে পড়ালেখা ও কাজ করতে পারে, সে জন্য দাতাদের উচিত জনগোষ্ঠীটির পাশে দাঁড়ানো।

এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েক শ রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে সংস্থাটি। তাঁরা এইচআরডব্লিউর কাছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, রাখাইনের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার আগে হত্যা ও ধর্ষণ করেছিলেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। তখন প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, হত্যা করা হয় কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে।

এইচআরডব্লিউ যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছে, এমন একজন রোহিঙ্গা আবদুল হালিম (৩০)। তাঁর ভাষায়, ‘তারা (মিয়ানমারের সেনা) আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল, আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছিল এবং শিশুদের পুড়িয়ে মেরেছিল। ওই পাশবিকতা থেকে বাঁচতে আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিই। আমরা পাঁচ বছর ধরে কুতুপালং শরণার্থীশিবিরে অবস্থান করছি।’

এদিকে এখনো যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে অবস্থান করছে, তারাও চরম নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। একই কথা বলা হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতেও। সংস্থাটি বলছে, পাঁচ বছর পর এসে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের এখনো স্বাধীনতা নেই। তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। পর্যাপ্ত খাবার, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারেও বঞ্চনার শিকার তারা। ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এসব সমস্যা আরও বেড়েছে।

সমস্যা রয়েছে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলোতেও। কক্সবাজারের একটি রোহিঙ্গা শিবিরের শরণার্থী সান থাই শিন অ্যামনেস্টিকে বলেন, সেখানে তাঁরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। শিবিরে বিভিন্ন গ্যাংয়ের মধ্যে সংঘর্ষে রোহিঙ্গারা প্রাণ হারাচ্ছে। নিজ দেশে তাঁরা ফিরতে পারবেন কি না, তা আদৌ জানেন না।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি রিজিওনাল ডিরেক্টর ফর ক্যাম্পেইনস মিং ইউ হাহ বলেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নের পাঁচ বছর পূর্তি মন করিয়ে দিচ্ছে, এর জন্য মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় কোনো সামরিক কর্মকর্তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা ও রাখাইনে এখনো থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে আছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এই জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন করেও বছরের পর বছর যে দায়মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে, তার ইতি টানতে ন্যায়বিচার জরুরি।