কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু থাইল্যান্ডের

কম্বোডিয়ায় গোলার হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন দেশটির এক সেনাফাইল ছবি: রয়টার্স

থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যে লড়াই বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীর প্রচেষ্টার মধ্যেই আজ রোববার এ অভিযান শুরু হয়েছে।

থাইল্যান্ড বলছে, তাদের ‘সার্বভৌম অঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্য’ এ অভিযান চালানো হচ্ছে। আজ উপকূলীয় ত্রাত প্রদেশে কারফিউ ঘোষণা করেছে তারা।

আগের দিন গতকাল শনিবার থাইল্যান্ডের সঙ্গে সব সীমান্ত পারাপার বন্ধ করার ঘোষণা দেয় কম্বোডিয়া। এর পরদিনই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ দুটির মধ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হলো।

থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল পারাচ রত্তানাচাইয়াপানের বরাতে সংবাদপত্র মাতিচন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই বাহিনী ত্রাত উপকূলীয় প্রদেশের একটি এলাকায় ‘থাইল্যান্ডের সার্বভৌম অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে’ সামরিক অভিযান শুরু করেছে।

ঔপনিবেশিক যুগের সীমানাসংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ থেকে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের সূচনা হয়। এ লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন সেনা ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দুই দেশের ৫ লাখের বেশি মানুষ। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল পারাচ রত্তানাচাইয়াপানের বরাতে সংবাদপত্র মাতিচন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই বাহিনী ত্রাত উপকূলীয় প্রদেশের একটি এলাকায় ‘থাইল্যান্ডের সার্বভৌম অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে’ সামরিক অভিযান শুরু করেছে।

পারাচ রত্তানাচাইয়াপান বলেন, ভোরবেলায় অভিযানটি শুরু হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আত্মরক্ষা ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ নীতির আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।

থাই সেনাবাহিনী বলেছে, ‘তারা বিরোধী বাহিনীগুলো উৎখাত করে সফলভাবে এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ও পুনরুদ্ধার করেছে।’

থাইল্যান্ডের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থাই পিবিএসের খবরে বলা হয়, দেশটির সেনাবাহিনী সব বিরোধী বাহিনীকে উৎখাত করার পর ওই এলাকায় থাইল্যান্ডের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে।

আরও পড়ুন

সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে থাইল্যান্ডের টিভি থ্রি মর্নিং নিউজের খবরে বলা হয়েছে, রোববার ভোরে দেশটির সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সীমান্ত এলাকায় অভিযান শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ছাড়া ড্রোন হামলাও হয়েছে।

সাম্প্রতিক এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী এখনো সংঘর্ষের বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।

তবে কম্বোডিয়ার সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট কম্বোডিয়ানেস বলছে, অন্তত সাতটি এলাকায় হামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুরসাত প্রদেশও রয়েছে। সেখানে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী থমা দা কমিউনে বোমা ফেলতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে।

থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী বান্তেয় মিঞ্চে প্রদেশের বোইয়ুং ত্রাকুন গ্রামের দিকে গোলা হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আল–জাজিরা তাৎক্ষণিকভাবে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেনি।

উল্লেখ্য, গতকাল সকালেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া তাদের সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়েছে।

এর আগে ট্রাম্প একে একে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। ফোনালাপের পর দেশ দুটির অবস্থান জানান ট্রাম্প।

সীমানা নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ থেকে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের সূচনা হয়। এ লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন সেনা ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দুদেশের ৫ লাখের বেশি মানুষ। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘তাঁরা (থাইল্যান্ড আর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী) আজ (শনিবার) সন্ধ্যা থেকেই সব ধরনের গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন। মালয়েশিয়ার দুর্দান্ত প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সহায়তায় প্রস্তুত করা যে শান্তিচুক্তিতে আমার ও তাঁদের দুজনের সই রয়েছে, সেটায় ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।’

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে গত জুলাইয়ে প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ ও মালয়েশিয়ার প্রত্যক্ষ উদ্যোগে দেশ দুটির মধ্যে এ যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছিল। থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে তাদের বাণিজ্যসুবিধা স্থগিত করার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

গত অক্টোবরে আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সম্মেলনে অংশ নিতে ট্রাম্প মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যান। তখন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে সই হয়। চুক্তিতে সই করেন দেশ দুটির প্রধানমন্ত্রীরা; সই করেন ট্রাম্পও।

তবে থাইল্যান্ড গত নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থগিত করে। সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন থাই সেনা আহত হওয়ার পর ব্যাংককের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর থেকে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে দুই দেশের মধ্যে।

আরও পড়ুন