নিজেদের ভূখণ্ড থেকে কম্বোডিয়ার বাহিনীকে সরিয়ে দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিয়ানচে প্রদেশের বাসিন্দারা এলাকা ছাড়ছেন। ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ছবি: রয়টার্স

থাইল্যান্ড বলেছে, নিজেদের ভূখণ্ড থেকে কম্বোডীয় বাহিনীকে সরিয়ে দিতে তারা আজ মঙ্গলবার পদক্ষেপ নিচ্ছে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলজুড়ে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যেক পক্ষই সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে। এ সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যকার অস্ত্রবিরতি ভেঙে গেছে। গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি সে সময় দুদেশের মধ্যকার পাঁচ দিনের লড়াইয়ের অবসান ঘটিয়েছিল।

আজ কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রাতভর সংঘর্ষে তাদের আরও দুই বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এতে নতুন সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে কম্বোডিয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৬–এ দাঁড়িয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক থাই সেনাও নিহত হয়েছেন।

এদিকে আজ সকালে এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী বলেছে, থাই উপকূলীয় প্রদেশ ত্রাতের ভেতর কম্বোডীয় বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের সরিয়ে দিতে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত গতকাল সোমবার রাতে বলেন, ‘থাইল্যান্ড যেন নিজেদের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের অজুহাতে বেসামরিক গ্রামগুলোর ওপর সামরিক শক্তি প্রয়োগ না করে।’

এর আগে কম্বোডিয়া বলেছিল, তাদের নিজেদের বাহিনী টানা হামলার শিকার হলেও পাল্টা হামলা চালায়নি।

থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী বলেছে, কম্বোডীয় বাহিনী সীমান্ত এলাকায় তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে, স্নাইপার ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে, বাংকার শক্তিশালী করছে এবং নতুন পরিখা খনন করছে। নৌবাহিনী বলেছে, এ কর্মকাণ্ডগুলো তারা থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি ও গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখছে।

আরও পড়ুন

গত জুলাইয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে টানা পাঁচ দিন ধরে সংঘর্ষ চলে। দুই দেশই একে অপরকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা ও ভারী গোলাবর্ষণ করে। ওই সংঘাতে কমপক্ষে ৪৮ জন নিহত এবং ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে অস্ত্রবিরতি হয়। গতকাল হওয়া সংঘর্ষের মাত্রা ছিল জুলাই সংঘর্ষের পর সবচেয়ে তীব্র।

ইতিমধ্যে, থাইল্যান্ড তাদের সীমান্তবর্তী পাঁচটি প্রদেশ থেকে ৪ লাখ ৩৮ হাজার বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। কম্বোডিয়া কর্তৃপক্ষও বলেছে, লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

থাই সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের ১৮ সেনা আহত হয়েছেন আর কম্বোডীয় সরকার বলেছে, দেশটির ৯ বেসামরিক লোক আহত হয়েছেন।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্ত রয়েছে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে তাদের মধ্যে সীমানার অনির্ধারিত অংশগুলোর সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধ চলছে।

গত মে মাসে সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর দুই দেশের উত্তেজনা বেড়ে যায়। এ ঘটনার পর সীমান্তে ব্যাপক সেনা মোতায়েন করা হয়। এতে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে।