ব্যাংককে মার্কেটে আগুন লেগে এক হাজার প্রাণীর মৃত্যু

খাঁচার ভেতর কোনো রকমে বেঁচে আছে কয়েকটি মুরগি। দ্রুত এদের দোকান থেকে বের করে খোলা জায়গায় রাখা হচ্ছে

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের জনপ্রিয় চাতুচাক মার্কেটে আজ মঙ্গলবার ভোরে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। এতে শতাধিক দোকান পুড়ে প্রায় এক হাজার প্রাণী মারা গেছে। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে পাখি, কুকুর, বিড়াল, সাপ, ইঁদুর, অজগর, গিরগিটি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে এতে কোনো মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, মার্কেটের যে অংশে পোষা প্রাণীর দোকানগুলো রয়েছে, সেখানে ১১৮টি দোকান পুড়ে গেছে।

মার্কেটে পোষা প্রাণী বিক্রির ওই অংশ বন্ধ করে দিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছিল। এ ঘটনা আবারও কর্তৃপক্ষকে সেই প্রয়োজনীয়তাকে মনে করিয়ে দিল। মার্কেটের এ অঞ্চলে প্রাণীদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হচ্ছিল বলে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছিল। ফলে এই প্রাণীদের মধ্যে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছিল।

খাঁচায় মরে পড়ে আছে পাখি
ছবি: এএফপি

চাতুচাক দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মার্কেটগুলোর একটি। সেখানে সরু সরু গলিতে হাজার হাজার দোকান রয়েছে। এটি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ও ছুটির দিনে বসা মার্কেট। বলা হয়, প্রতি শনি ও রোববার সেখানে প্রায় ২ লাখ পর্যটক জড়ো হন। কিন্তু যে অংশে পোষা প্রাণী বিক্রি হয়, সেটি সপ্তাহজুড়েই খোলা থাকে।

আমপোর্ন ওয়ানাসুত  নামের এক দোকানমালিক আগুনের খবর পেয়ে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন আসি, ততক্ষণে সব পুড়ে শেষ। আমার কিছুই করার ছিল না। কারণ, ভেতরে খুব অন্ধকার ছিল। আমি প্রাণীগুলোকে বের করতে পারলাম না। এরা সব পুড়ে মরল।’

৪২ বছর বয়সী আমপোর্ন কচ্ছপ, অজগর, কিং স্নেকসহ বিভিন্ন সরীসৃপ বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না এখন কী করতে হবে। আমার মনে হচ্ছে, আবার শুরু থেকে শুরু করতে হবে। কিন্তু কীভাবে, তা জানি না।’

আজ বিকেলে বিবিসির সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, দোকানমালিকেরা ক্ষতিপূরণ পেতে লাইন দাঁড়িয়ে নিজেদের নাম লিপিবদ্ধ করছিলেন।

খাঁচার ভেতর মরে পড়ে আছে বেশ কিছু মুরগি
ছবি: এএফপি

চাতুচাক জেলা দপ্তরের হিসাবে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই তা নেভানো হয়েছে।

প্রাণী অধিকার সংগঠন দ্য পিপলস ফর দ্য ইথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিমেলের (পেটা) ভাষ্য, এই আগুন জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাসন বেকার বলেন, ‘প্রাণীরা আমাদের বিনোদনের জন্য নয়...পেটা থাই সরকার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে এই বাজার, যেখানে প্রাণীদের কষ্ট পেতে হয়, সেটি যেন আর না খোলে।’

অন্যদিকে থাইল্যান্ডে ওয়াইল্ডলাইফ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন চাতুচাক মার্কেটকে ‘ব্যাংককের লজ্জা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ফাউন্ডেশনের পরিচালক এডউইন উইক বলেন, নিরীহ এই প্রাণীগুলোকে অনেক দেশে অবৈধভাবে পাচার করা হয়। এটা অনৈতিক, নিষ্ঠুর, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়।