এবার দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের স্পিবার কিম জিন-পিওয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ছবি : রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে উত্তেজনা কাটতে না কাটতেই এবার কোরীয় উপদ্বীপে তাঁর সফর নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে তাইওয়ান সফর শেষে গত বুধবার তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছান। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি কোরীয় সীমান্তের সুরক্ষিত ডিমিলিটারাইজড জোন (ডিএমজেড) পরিদর্শন করেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ার একজন কর্মকর্তা বলেন, পেলোসি বুধবার রাতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে পৌঁছানোর পর দেশটির পার্লামেন্ট জাতীয় পরিষদের স্পিকার কিম জিন-পিওসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরদিন তিনি পারমাণবিক ক্ষমতাধর উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের ডিএমজেড এলাকায় যান। তিনি আলোচিত পানমুনজাম ও জয়েন্ট সিকিউরিটি এরিয়া পরিদর্শন করেন। ২০১৯ সালের পর সর্বোচ্চ পদধারী মার্কিন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সেখানে গেলেন। ওই সীমান্তে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সেনারা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ স্থানেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

পেলোসির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে কিম জিন-পিও বলেছেন, পেলোসি তাঁদের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির ক্রমবর্ধমান হুমকি ও গুরুতর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। পেলোসির ডিএমজেড এলাকায় সফরকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী প্রতিরোধের একটি চিহ্ন হিসেবে দেখছেন। পরে পেলোসি ও কিম–জিন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তাঁরা উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলা এবং কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন ছুটিতে থাকায় পেলোসির সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেননি। তবে ৪০ মিনিট টেলিফোনে পেলোসির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গতকাল ইউন বলেছেন, পেলোসির ডিএমজেড এলাকা পরিদর্শন উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলা করার বিষয়টিই প্রতিফলিত হয়েছে। পেলোসির ওই সফরকে ইঙ্গিত করে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র উত্তর কোরিয়া সতর্ক করে বলেছে, তাদের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের সমালোচনা সহ্য করা হবে না। কোনো দেশকে নিজেদের সার্বভৌম অধিকারকে লঙ্ঘন করতে দেবে না তারা।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার স্থায়ী মিশন থেকে স্থানীয় সময় গত বুধবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। ‘পেলোসিকে অপমান’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পর সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তি স্পিকার পেলোসি দক্ষিণ কোরিয়া সফরে এলেও তাঁর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ না করায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সমালোচনা মুখে পড়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম ও ইউনের দলের আইনপ্রণেতারা বলছেন, পেলোসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাতে কোনো প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়নি। অথচ ওই রাতে সিউলে নাটক দেখে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন ইউন। বিষয়টি পেলোসির জন্য অপমানজনক।

গত মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইউন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে দুই দেশের যৌথ সামরিক মহড়ার মতো বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উত্তর কোরিয়া এ যৌথ মহড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ। একে আক্রমণের জন্য মহড়া হিসেবে বলে আসছে পিয়ংইয়ং।

নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় ইউন চীনবিরোধী কড়া অবস্থান দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়াকে ঠেকাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা কিনবেন। মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা কেনার কট্টর বিরোধিতা করে আসছে বেইজিং।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো ধারণা করছে, চীনকে শান্ত রাখতেই পেলোসির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ এড়ালেন ইউন। সিউলে আসার পর এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং করেন পেলোসি। এ সময় সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। গতকাল রাতেই তিনি জাপান সফরে যান। চীনের কড়া হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেও পেলোসি মঙ্গলবার তাইওয়ানে যান। এই সফরকে কেন্দ্র করে গতকাল চীন তাইওয়ান ঘিরে বিশাল সামরিক মহড়া করেছে।