সীমান্তের অখণ্ডতা চূড়ান্ত সীমা: পাকিস্তানকে ইরানের হুঁশিয়ারি

ইরান ও পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছেছবি: তেহরানে পাকিস্তান দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

ইরানের সীমান্তে পাকিস্তানের হামলাকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশের সীমান্তের অখণ্ডতা একটি চূড়ান্ত সীমা। গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয় বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও সীমান্তের অখণ্ডতা ইরানের চূড়ান্ত সীমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরান প্রত্যাশা করে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্বসুলভ প্রতিবেশী পাকিস্তান তার এই অঙ্গীকার জোরালোভাবে মেনে চলবে যে পাকিস্তানের মাটিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি তৈরি ও দলবদ্ধ হওয়া তারা প্রতিরোধ করবে।’

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসীদের অবস্থানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র চালানো হয় সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে। ইরানের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের (আইআরজিসি) সদস্যরা একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে ইরানের সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করতে দেখার পর ওই হামলা চালানো হয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইআরজিসি হামলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির ঘাঁটিতে ওই অভিযান পরিচালনা করে। হামলাটি চালানো হয় আবাসিক এলাকাগুলো কয়েক কিলোমিটার দূরে। দেশের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো আসন্ন সন্ত্রাসী হুমকি দেখলে তা মোকাবিলা করার ইরানের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর যে দায়িত্ব, তারই অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ইরান সব সময় এর প্রতিবেশীদের প্রতি প্রতিবেশীসুলভ নীতি মেনে চলে এবং শত্রু ও সন্ত্রাসীদের কখনো এই সম্পর্ক বিনষ্ট করার সুযোগ দেবে না। বিশেষত যখন ইহুদি শাসকদের চলমান গণহত্যা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রথম উদ্বেগের বিষয়।’

গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ওই হামলায় অন্তত দুই শিশু নিহত হয়। হামলার পর তেহরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা পাকিস্তানি ভূখণ্ডে সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের ‘সন্ত্রাসীদের’ ওপর হামলা চালিয়েছে। এই গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

এই হামলার এক দিন পর বৃহস্পতিবার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করে হামলা চালায় পাকিস্তান। ওই হামলায় ৪ শিশুসহ ৯ জন নিহত হন। পাল্টাপাল্টি হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক গতকাল বলেন, সম্প্রতি ইরান ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলা ও দুই পক্ষের প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আর হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি গতকাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অত্যন্ত নিবিড়ভাবে’ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, ‘দুই দেশই অস্ত্রশস্ত্রে সমৃদ্ধ দেশ। আমরা চাই না উত্তেজনা আরও বাড়ুক।’

আরও পড়ুন

এই পরিস্থিতিতে আজ শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি)। ওই বৈঠকে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার ও সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনীরসহ সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এর মধ্যে আজ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানীর টেলিফোনে কথা হয়েছে। সেখানে তেহরানের সঙ্গে সব বিষয়ে কাজ করতে ইসলামাবাদ প্রস্তুত রয়েছে বলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে।

আরও পড়ুন