নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিল তাইওয়ান, এখন চীন কী করতে পারে

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রার্থী লাই চিং-তেছবি: রয়টার্স

তাইওয়ানের ভোটাররা গতকাল শনিবার নতুন নেতা বেছে নিয়েছেন।

গতকাল তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রার্থী লাই চিং-তে।

তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে শক্ত অবস্থান ডিপিপির। তাই দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী লাইকে প্রত্যাখ্যানের জন্য তাইওয়ানের ভোটারদের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ দিয়ে আসছিল চীন।

কিন্তু তাইওয়ানের ভোটাররা চীনা চাপ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে ডিপিপিকে তৃতীয় দফায় জয়ী করলেন।

তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন সার্বভৌম মনে করে। অন্যদিকে তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে চীন।

চীন, বিশেষ করে আট বছর ধরে স্বশাসিত তাইওয়ানের প্রতি তার হুমকি বাড়িয়ে চলছে।

বিজয়ী প্রার্থী লাই তাইওয়ানের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাঁকে অত্যন্ত অপছন্দ করার কথা বেইজিং প্রকাশ্যেই বলে এসেছে।

তাইওয়ানের এই নির্বাচনে কে জয়লাভ করতে যাচ্ছেন, বিশ্ব শুধু তার দিকেই নজর রাখেনি, তাইওয়ানের প্রতিবেশী চীন কীভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটিও বিশ্বের দেখার বিষয়।

চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক প্রজন্মের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা। চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণকে একটি ঐতিহাসিক অনিবার্য বিষয় বলে তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আগেই বলেছেন, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হলেও বেইজিংয়ের এই লক্ষ্য অর্জন করা হবে।

তাইওয়ানে ২০১৬ সালে শেষবার সরকার পরিবর্তন হয়েছিল। তখনই ক্ষমতায় আসে ডিপিপি। ডিপিপি ক্ষমতায় আসার জেরে তাইপের সঙ্গে বেশির ভাগ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে বেইজিং।

পরবর্তী বছরগুলোতে তাইওয়ানের ওপর অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে চীন। এর ফলে তাইওয়ান প্রণালি বিশ্বের প্রধান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাকর স্থানগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত হয়।

অতীতে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা শেষ পর্যন্ত ‘পুনরেকত্রীকরণ’ অর্জনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি বারবার বলে আসছেন, তাইওয়ান ইস্যুটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অমীমাংসিত থাকা উচিত নয়।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের চীনবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক আমান্ডা সিয়াও বলেছেন, তাইওয়ানের এই নির্বাচন এমন সময়ে হলো, যখন প্রণালিতে বেশি উত্তেজনা বিরাজ করছে। যখন প্রণালিতে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমান্ডা সিয়াও আরও বলেন, তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে একটি সংঘাত বাধার আশু আশঙ্কা নেই। কিন্তু যদি সংঘাত বাধে, তাহলে তার প্রভাব হবে বৈশ্বিক।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লাইসহ তিন প্রার্থী অংশ নেন। নির্বাচনী প্রচারে তাঁরা সবাই এই পরিস্থিতি এড়ানোর কথা বলে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা সবাই শান্তি বজায় রাখার কথা বলেছেন। স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কথা বলেছেন। তাইওয়ানের বেশির ভাগ মানুষ বিষয়টি চান বলে জরিপেও উঠে এসেছে।

কিন্তু কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে তিন প্রার্থী পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ তুলে ধরেছিলেন। তাঁরা সবাই চীনের আগ্রাসন ঠেকাতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। কিন্তু নীতিগত অগ্রাধিকার, বিশেষ করে বেইজিংয়ের সঙ্গে কীভাবে চলা যায়, সে বিষয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিমত দেখা যায়।

লাই যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের মতো সমমনা গণতান্ত্রিক অংশীদারদের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি তিনি এই অবস্থানও বজায় রেখে এসেছেন যে তাইওয়ান ইতিমধ্যে একটি প্রকৃত সার্বভৌম জাতি। তবে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি বেইজিংয়ের কাছে অগ্রহণযোগ্য।

গতকাল সন্ধ্যায় সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে লাই বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রে একটি নতুন অধ্যায় লেখার জন্য আমি তাইওয়ানের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

লাই তাঁর এই জয়কে গণতান্ত্রিক সম্প্রদায়ের বিজয় হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, তাঁরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছেন, গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের মধ্যে তাঁরা গণতন্ত্রের পক্ষে।

লাইয়ের জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় চীনের তাইওয়ানবিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র চেন বিনহুয়া একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এই ভোট চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণের অনিবার্য প্রবণতাকে বাধাগ্রস্ত করবে না। এই ভোট মৌলিক ভূচিত্রকে পরিবর্তন করবে না। তাইওয়ান চীনের তাইওয়ান।

বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করে বলেছেন, তাইওয়ানের ক্ষমতায় যিনিই আসুক না কেন, প্রণালিতে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। তবে ডিপিপি ও লাইকে অত্যন্ত অপছন্দ করার কথা বেইজিং প্রকাশ্যেই বলে এসেছে।

লাইকে একজন ‘বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে এসেছে বেইজিং। এখন নির্বাচনে তাঁর জয়ের জেরে তাইওয়ানের ওপর অর্থনৈতিক বা সামরিক চাপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বেইজিং।