মাসা হত্যার তদন্ত হবে : রাইসি

ইরানের তেহরনে নারীদের বিক্ষোভ
ছবি : এএফপি

পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে দমন–পীড়নের আশ্রয় নিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী; গ্রেপ্তার করা হচ্ছে অনেককে। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার বিক্ষোভ করেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন শহরে মোতায়েন করা হয়েছে দাঙ্গা পুলিশ। এমন অস্থির পরিস্থিতিতে মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।

মাসার মৃত্যুতে ইরানে অব্যাহত বিক্ষোভ চার সপ্তাহে গড়িয়েছে। হিজাব নীতি ভঙ্গ করায় নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা মাসার মৃত্যু হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর। এর পর থেকেই বিক্ষোভ দানা বাঁধে। ক্রমেই তা জোরদার হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট রাইসি মাসার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

চলমান বিক্ষোভ ইরান সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, সরকারকে এখন শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়; বরং তরুণ–তরুণী থেকে শুরু করে স্কুলের কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস বলেছে, বিক্ষোভে দমন-পীড়নের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।

বিক্ষোভে অংশ নিতে গিয়ে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ নিখোঁজও হয়েছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর তেহরানে বিক্ষোভের পর নিকা শাকরামি নামের ১৬ বছরের এক কিশোরীও নিখোঁজ হয়। পরে তার মরদেহ মর্গে পাওয়া যায়। তার পরিবারের দাবি, তাকে হত্যার পর মৃতদেহ চুরি করে একটি গ্রামে গোপনে দাফন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ইরানের বিচার বিভাগ।

গত মঙ্গলবার তেহরানের আইনজীবী আলী সালেহিকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, নিকার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের জন্য একটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিক্ষোভে আর অংশ না নেওয়ার শর্তে ৪০০ বিক্ষোভকারীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যাঁরা জাতীয় নিরাপত্তাবিরোধী কাজে যুক্ত থাকবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও বিক্ষোভ দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। প্রতিবাদ মিছিলে দেখা যাচ্ছে স্কুলশিক্ষার্থীদেরও। স্কুলগামী মেয়েরা তাদের হিজাব খুলে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়েছে।

রাজধানী তেহরান থেকে পশ্চিমে কারাজ শহরে স্কুলের মেয়েরা এক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বের করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত সোমবার পোস্ট করা এক ভিডিও ফুটেজে তাঁদের চিৎকার করে ধিক্কার জানাতে দেখা যায়। শিক্ষা কর্মকর্তার দিকে খালি পানির বোতলও ছুড়ে মারতে দেখা গেছে। এরপর ওই কর্মকর্তা স্কুলের গেট দিয়ে বের হয়ে যান।

কারাজ শহরের আরেকটি ঘটনার ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা যদি এক না হই, তারা আমাদের একের পর এক মেরে ফেলবে।’ ইরানের ফার্স প্রদেশের পঞ্চম জনবহুল শহর শিরাজের প্রধান সড়ক অবরোধ করে স্কুলের মেয়েরা ‘একনায়কের মৃত্যু’ বলে স্লোগান দেয়।

মঙ্গলবারও কারাজ, তেহরান, উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলের সাকেজ ও সানানদাজ শহরে স্কুলের মেয়েরা বিক্ষোভ করেছে। বেশ কয়েকটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে হিজাব খুলে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে তলব

বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে দ্বিতীয়বারের মতো ইরানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে তেহরান। চলমান অস্থিরতায় পশ্চিমা হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলছেন ইরানের নেতারা। বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের জন্য ‘বিদেশি শত্রু’দের দায়ী করে আসছে সরকার।

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, দেশের শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। আর সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সোমবার দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন