জাপানে বন্ধ থাকা বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রটি আবারও সচল করার প্রস্তাব অনুমোদন

কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রফাইল ছবি: রয়টার্স

জাপানের নিগাতায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কাশিওয়াজাকি-কারিওয়াকে আবারও সচল করার পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে দেশটির আঞ্চলিক পরিষদ। এর মধ্য দিয়ে ২০১১ সালের ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কেন্দ্রটি চালুর প্রক্রিয়ায় আরও এক ধাপ এগোল জাপান।

এর আগে গত মাসে প্রশাসনিক অঞ্চল নিগাতার গভর্নর হিদেয়ো হানাজুমি বিদ্যুৎকেন্দ্র আবারও চালু করার বিষয়ে অনুমোদন দেন।

২০১১ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পর ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রে তিনটি চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় জাপানের কর্তৃপক্ষ কাশিওয়াজাকি-কারিওয়াসহ বেশ কিছু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়।

তবে এখন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারকে কেন্দ্র করে বাড়তে থাকা জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য জাপান পারমাণবিক সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়।

কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান নিগাতা অঞ্চলে। সেখানকার আঞ্চলিক পরিষদ আজ সোমবার এ–সংক্রান্ত একটি অতিরিক্ত বাজেট বিলের ওপর ভোটাভুটি করে। গভর্নরের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে একটি সম্পূরক প্রস্তাবও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পরিষদের ৫৩ সদস্যের বেশির ভাগই দাঁড়িয়ে সমর্থন জানানোর পর স্পিকার বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে।’

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অনুমোদন করবে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)। আঞ্চলিক পরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর তারা এখন এটিকে আবারও চালুর জন্য চূড়ান্ত অনুমতি পেতে জাপানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাপানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, টেপকো বছর শেষের আগেই জাপানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে এ–সংক্রান্ত আবেদন জমা দেবে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, টোকিও থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান। ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে ফুকুশিমা দাইচি কেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বন্ধ ঘোষণা করা ৫৪টি পারমাণবিক চুল্লির একটি এটি। ফুকুশিমা বিপর্যয় ছিল চেরনোবিলের পর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা।

আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার চেষ্টা হিসেবে জাপান নতুন করে সচল করার উপযোগী ৩৩টি চুল্লির মধ্যে ১৪টি আবার চালু করেছে।

নতুন করে সচল হওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া হবে প্রথম কেন্দ্র, যেটি পরিচালনা করবে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)। প্রতিষ্ঠানটি ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও পরিচালনা করত।

নিগাতা অঞ্চলের বাসিন্দাদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে টেপকো চলতি বছরের শুরুতে প্রতিশ্রুতি দেয়, আগামী ১০ বছরে তারা প্রদেশটিতে ১০০ বিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলার) বিনিয়োগ করবে। কিন্তু অনেক স্থানীয় বাসিন্দার সংশয় এখনো কাটেনি।

আরও পড়ুন

গত অক্টোবরে নিগাতা প্রশাসনিক অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ একটি জরিপ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ বাসিন্দা মনে করেন না, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নতুন করে চালুর প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ টেপকোর হাতে কেন্দ্র পরিচালনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

২০১১ সালে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয়ের পর আশপাশের এলাকা ছেড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নিগাতায় আশ্রয় নেন। তেমনই একজন ৫২ বছর বয়সী আয়াকো ওগা। পারমাণবিক কর্মসূচিবিরোধী এই আন্দোলনকর্মী ও কৃষক এখন তাঁর বাড়ির কাছে নতুন করে তৈরি হওয়া হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।