সীমান্ত বন্ধে কাজ করার সময় সেনাদের গুলি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া: অভিযোগ উত্তরের
সীমান্ত এলাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার সেনা তাঁদের সৈন্যদের উদ্দেশে গুলি চালিয়েছেন বলে আজ শনিবার অভিযোগ করেছে উত্তর কোরিয়া। অভিযোগ, এতে পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন নেতা লি জে মিউং পারমাণবিক অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছেন। এ কারণে তিনি ‘সামরিক আস্থা’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে পিয়ংইয়ং জানিয়েছে, সিউলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নত করার কোনো আগ্রহ নেই।
সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল কো জং চোলের এক বিবৃতির উদ্ধৃতির দিয়ে পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা উপদ্বীপকে বিভক্তকারী সীমান্ত স্থায়ীভাবে বন্ধের কাজ করার সময় সর্বশেষ এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনাকে ‘গুরুতর উসকানি’ হিসেবে উল্লেখ করে কো জং বলেন, সিউলের সামরিক বাহিনী উত্তর কোরিয়ার সেনাদের দিকে ১০ বারের বেশি সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুতর উসকানি, যা দক্ষিণ সীমান্ত এলাকায় বিপুলসংখ্যক সেনার মুখোমুখি অবস্থানকে অবধারিতভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাবে।’
তবে দক্ষিণ কোরিয়া এখনো এই সংঘর্ষের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
‘ইচ্ছাকৃত উসকানি’
দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে সর্বশেষ সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছিল চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে। সে সময় উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১০ জন সেনা সদস্য সাময়িকভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনারা সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছিলেন।
তখন কোরীয় উপদ্বীপে দুই দেশের মধ্যবর্তী অসামরিক এলাকায় (ডিমিলিটারাইজড জোন–ডিএমজেড) ওই সেনা সদস্যদের দেখা গিয়েছিল।
গত বছরের অক্টোবরে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছিল, তারা দক্ষিণ সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে। এ ছাড়া যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত এবং দুর্ঘটনাজনিত সংঘর্ষ রোধে তারা মার্কিন বাহিনীকে একটি টেলিফোন বার্তা পাঠিয়েছে।
এর কিছুদিন পরই পিয়ংইয়ং উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সংযোগকারী প্রতীকী সড়ক ও রেলপথের অংশ বিশেষ ধ্বংস করে দেয়।
কো জং সতর্ক করে বলেন, সীমান্ত বন্ধের কাজে বাধা দেওয়া হলে উত্তর কোরিয়ার সেনারা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
কো জং বলেন, ‘যদি বেসামরিক এই প্রকল্পকে নিয়ন্ত্রণ বা বাধা দেওয়ার ঘটনা অব্যাহত থাকে, আমাদের সেনারা এটিকে ইচ্ছাকৃত সামরিক উসকানি হিসেবে গণ্য করবে এবং সমুচিত পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।’
‘আস্থা পুনরুদ্ধার’
লি জে মিউংয়ের তুলনায় তাঁর পূর্বসূরি অনেক বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। এ কারণে দুই কোরিয়ার সম্পর্ক কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল।
গত বছর উত্তর কোরিয়া আবর্জনাভর্তি হাজারো বেলুন দক্ষিণে পাঠিয়েছিল। তারা দাবি করেছিল, এসব দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মীদের পাঠানো উত্তরবিরোধী প্রচারণামূলক বেলুনের পাল্টা জবাব।
পরে দক্ষিণ কোরিয়া কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সীমান্তে লাউডস্পিকার সম্প্রচার চালু করে। এর মধ্যে ছিল কে-পপ গান ও আন্তর্জাতিক খবর। জবাবে উত্তর কোরিয়া সীমান্তে অদ্ভুত ও অস্বস্তিকর শব্দ সম্প্রচার শুরু করে।
লি নির্বাচিত হওয়ার পর সিউল জানায়, সীমান্ত এলাকায় উভয় দেশই প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করেছে। পরে বলেছিল, উত্তর কোরিয়ার সেনারা সীমান্ত থেকে লাউডস্পিকার ভেঙে ফেলছে।
লি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই তিনি পারমাণবিক অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাবেন। গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, তাঁর সরকার উত্তেজনা কমানো ও আস্থা পুনরুদ্ধারে ধারাবাহিক পদক্ষেপ নেবে।
তবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং বলেছেন, দক্ষিণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ‘কোনো ইচ্ছা নেই’ উত্তর কোরিয়ার।
দুই কোরিয়া এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের ময়দানে আছে। কারণ, ১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধ একটি অস্ত্রবিরতিতে শেষ হয়েছিল, কোনো শান্তি চুক্তিতে নয়।