মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাস বাড়াল জান্তা সরকার

জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশ করেন মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা। আজ থাইল্যান্ডের ব্যাংককে মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে
ছবি : রয়টার্স

মিয়ানমারে জারি থাকা জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে সামরিক বাহিনী সমর্থিত দেশটির নিরাপত্তা পরিষদ। ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে সামরিক জান্তা। জরুরি অবস্থা জানুয়ারিতেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী এর পরপরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সম্ভাব্য কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে আজ বুধবার। বিক্ষোভকারীরা এ উপলক্ষে দেশটির বিভিন্ন শহর ও দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও নীরব ধর্মঘট পালন করেছেন। এদিকে দেশটির নির্বাসিত বেসামরিক নেতারা জান্তার অবৈধ ক্ষমতা দখলের সমাপ্তি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিক্ষোভের সময় গণতন্ত্রকামীরা জনগণকে বাড়ির বাইরে না গিয়ে দোকানপাট বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করতে আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে সেনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই এ ঘর্মঘটের ডাক দিলেন বিক্ষোভকারীরা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সু চি সরকারের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনার পর ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির শীর্ষ জেনারেলের নেতৃত্বে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। ওই দিন মিয়ানমারের নতুন পার্লামেন্টে অধিবেশনের প্রস্তুতি চলছিল। আর তার আগেই ভোরবেলা অভিযান চালিয়ে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিসহ আইনপ্রণেতাদের আটক করেন সেনাসদস্যরা। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার ইতি টানা হয়।

মিয়ানমারে ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে বিশৃঙ্খলা চলছে। দেশটিতে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিক্ষোভকারীরা। চলছে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন, সংঘাত, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ। তাঁদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। এদিকে গঠিত হয়েছে জান্তাবিরোধী ছায়া সরকার ও প্রতিরোধ বাহিনী। পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর জারি করেছে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা।

চলতি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে বহু দলের অংশগ্রহণে একটি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের আয়োজন করবে সামরিক বাহিনী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য, সামরিক জান্তার অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে, তা হবে একটি ‘ধোঁকাবাজি’।

এদিকে মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নতুন নির্বাচনী আইন জারি করেছে দেশটির সামরিক জান্তা প্রশাসন। নতুন এ আইনের আওতায় দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে দুই মাসের মধ্যে নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে।

দেশটির প্রধান বাণিজ্য শহর ইয়াঙ্গুন ও মান্দালাই এলাকা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ছবিতে দেখা গেছে, জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। অবশ্য ১০০ জনের বেশি জান্তা সমর্থককেও ইয়াঙ্গুনে পৃথক সমাবেশ করতে দেখা গেছে। থাইল্যান্ড ও জাপানে মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে শত শত মানুষ জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন। ফিলিপাইনের ম্যানিলা শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে।

আরও পড়ুন

মঙ্গলবার সেনাসমর্থিত ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল (এনডিএসসি) মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে। এর মধ্যে দেশটির গণতন্ত্রকামী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) কার্যক্রমের বিষয়ও রয়েছে। দেশটিতে জান্তাবিরোধী সরকার হিসেবে এনইউজি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশটির ছায়া সরকার হিসেবে কাজ করছে।

সেনা অভ্যুত্থানের দুই বছর পূর্তিতে গতকাল বুধবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এবারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন দেশটির জ্বালানিবিষয়ক কর্মকর্তা ও জান্তাসদস্য।

আরও পড়ুন

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ মিয়ানমারের ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন, খনি কোম্পানি, জ্বালানিবিষয়ক কর্মকর্তা এবং সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবার মিয়ানমার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজের (এমওজিই) কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল। এ ছাড়া এদিন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, জান্তার দমন-পীড়নে মিয়ানমারে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭০ হাজার মানুষ দেশ ছেড়েছেন। এসব কারণে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। আনা হয়েছে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ। কিন্তু এত কিছুর পরও ভাগ্য ফেরেনি মিয়ানমারবাসীর। তাঁদের গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। বরং প্রায় প্রতিটি দিন তাঁদের কাটাতে হচ্ছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়, প্রাণ নিয়ে সংশয়ে।

আরও পড়ুন