ইউক্রেনে যুদ্ধরত তরুণদের নিয়ে নেপাল সরকারের উদ্বেগ

রাশিয়ার সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নেপালি তরুণদের প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়াছবি: এপি

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন নেপালিরা। যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ছয়জন। এই খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। সেই থেকে চলছে প্রায় সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেওয়া এই যুদ্ধ।

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে হামলা চালানোয় জাতিসংঘের নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় নেপাল। অথচ সেই দেশ থেকেই রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে দেশ ছেড়েছেন অনেক তরুণ।

৪ ডিসেম্বর নেপালের গণমাধ্যম জানায়, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ছয়জন নেপালি। এক সপ্তাহ পর নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে সেই খবরের বিস্তারিত।

আরও পড়ুন

দ্য কাঠমান্ডু পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল বলেন, ‘ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যে (রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া) কিছু নেপালিকে বন্দী করে রেখেছে, এমন তথ্য আমরা সরকারিভাবে পেয়েছি। নেপালিরা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করছে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। ভ্রমণ বা পড়াশোনা ভিসা নিয়ে রাশিয়ায় যাওয়া কিছু নেপালিকে রুশ সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। সদ্য পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দু শর বেশি নেপালি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সেবায় নিয়োজিত। এটা আমাদের জন্য নতুন এবং কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।’

নেপালের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তা দীপেন্দ্র বাহাদুর সিং অবশ্য মনে করেন, কঠিন হলেও আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘(ইউক্রেন) যুদ্ধ নিয়ে এই মুহূর্তে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা শুধু নেপাল ও রাশিয়া এবং নেপাল ও ইউক্রেনের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমেই নিরসন করা সম্ভব। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের রক্ষা করা। তবে রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া এবং যুদ্ধের ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে ভিনদেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া যে অবৈধ, এটা তাদেরও (নাগরিক) বুঝতে হবে।’

ভারত ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে নেপালি সেনা
নেপালিদের অন্য দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে নেপালিরা যোগ দিয়ে আসছে ১৯৪৭ সাল থেকে। তবে ওই দুই দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি ঐতিহাসিক এক ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ফল। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের সময় ভারত ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে কর্মরত গোর্খা সেনাদের অধিকার রক্ষার্থে তিন দেশের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির ধারাবাহিকতায় এখনো প্রতিবছর ভারত ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নেপালিরা।

তবে রাশিয়ার সঙ্গে নেপালের সে রকম কোনো চুক্তি হয়নি। তা সত্ত্বেও গোপনে নাগরিকদের একাংশের রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার খবরে নেপাল সরকার উদ্বিগ্ন।

এক বিবৃতিতে নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নেপালের যেসব নাগরিক রাশিয়া বা ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধ করতে গেছেন, তাঁরা কার্যত অবৈধ কাজ করেছেন। কারণ, এই দুটি দেশের সঙ্গে নেপালের সে রকম কোনো চুক্তি নেই।

বিবৃতিতে জানানো হয়, নেপালিদের আর রণাঙ্গনে না পাঠিয়ে অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পুষ্প কমল দহলের সরকার।

এদিকে সম্প্রতি রাশিয়া থেকে নেপালে ফিরেছেন কয়েকজন। স্থানীয় গণমাধ্যমকে তাঁরা জানিয়েছেন, যুদ্ধের আগে তাঁদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।

বেশ কয়েকজনের অভিযোগ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে নামলেও রুশ সরকার অনেক মাসে তাঁদের বেতন দেয়নি।

আরও পড়ুন