মালদ্বীপ থেকে ভারতকে সেনা সরিয়ে নিতে হচ্ছে

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেনছবি: রয়টার্স

মালদ্বীপ থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে ভারত। আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে কয়েক দফায় সে দেশে মোতায়েন সেনাদের ভারতে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তবে সে দেশকে ভারতের দেওয়া দুটি হেলিকপ্টার ও একটি ডর্নিয়ার বিমান মালদ্বীপ সরকার রেখে দেবে। মালদ্বীপের সেনাবাহিনী ও ভারতীয় অসামরিক কর্মকর্তারা সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করবেন।

গতকাল শুক্রবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত ও মালদ্বীপের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কোর কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

বৈঠকের পর মালদ্বীপ সরকারের পক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এসব বিষয়ে বিস্তারিত কোনো কিছু বলা হয়নি।

ভারত শুধু জানিয়েছে, পারস্পরিক সম্মতিতে বিমান পরিষেবা অব্যাহত রাখতে দুই দেশ আলোচনা চালাচ্ছে। দুই দেশের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোর কমিটির তৃতীয় দফা বৈঠক ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে অনুষ্ঠিত হবে।

হেলিকপ্টার ও বিমানের সাহায্যে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রের প্রত্যন্ত এলাকায় অত্যাবশ্যক চিকিৎসাসামগ্রী, খাদ্য ও পণ্য যেমন সরবরাহ করা হয়, তেমনই চিকিৎসার প্রয়োজনে দুর্গত ও গুরুতর অসুস্থদের রাজধানী মালেতে নিয়েও আসা হয়। দুর্যোগ মোকাবিলায়ও ওই পরিষেবা অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন

ওই তিন হেলিকপ্টার ও বিমান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সে দেশে ৮৮ জন ভারতীয় সেনাসদস্য রয়েছেন। নির্বাচনের পর নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু সেই সেনাদের ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছেন। ১৫ মার্চ সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমাও নতুন সরকার ধার্য করে দিয়েছিল। মুইজ্জু ভোটে জেতেন ‘আউট ইন্ডিয়া’ স্লোগান দিয়ে।

দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কোর কমিটির প্রথম দফার বৈঠক হয়েছিল গত ১৪ জানুয়ারি। তারপরই মালদ্বীপ সরকারের তরফ থেকে সেনা প্রত্যাহারের ‘সময়সীমা’র কথা জানানো হয়েছিল। তবে সেই বৈঠকের পরও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই সময়সীমা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলেনি।

গত দ্বিতীয় দফা বৈঠকের পরও ভারত ওই বিষয়ে নীরব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও আলোচনার খুঁটিনাটি এড়িয়ে গেছেন।

মালদ্বীপে নবনির্বাচিত সরকারের প্রবল ভারত বিরোধিতা সে দেশে ক্ষোভের সঞ্চারও করেছে। ওই দেশের শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি শাসিত হলেও সংসদে বিরোধীরা সংখ্যাধিক্য। সম্প্রতি সংসদে সরকার ও বিরোধী পক্ষের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি হয়েছে। ভারতপন্থী শক্তি সরকারের তীব্র ভারত বিরোধিতার বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদও করছে।

অবশ্য ভারত সরকারিভাবে এখনো ওই ঘটনাবলি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে সে দেশে চীনা সামরিক জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মালদ্বীপের সরকার পক্ষের কয়েকজন সদস্যের ভারতবিরোধী মনোভাবের জন্য ভারতে তীব্র জনরোষ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মালদ্বীপকে বর্জনের ডাকও দেওয়া হয়েছে। প্রচার চলে, ছুটি কাটাতে সে দেশে ভারতীয়রা যাতে না যান, সেই প্রচারে ব্যাপক সাড়াও পড়ে। পর্যটননির্ভর মালদ্বীপে ভারতীয় পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেছে।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, যে দেশে ভারতীয় পর্যটকেরা ছিলেন সবচেয়ে বেশি, সেখানে এখন ভারত পঞ্চম স্থানে নেমে এসেছে। মালদ্বীপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, ভারত সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে।