উত্তর কোরীয় নেতা কিমের সঙ্গে এ বছরই বৈঠক করতে চান ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার বলেছেন, তিনি চলতি বছরেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান। তিনি আরও বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আরও আলোচনার জন্য তিনি প্রস্তুত।
দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং গতকাল সোমবার প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউস সফর করেন। ওভাল অফিসে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘ভবিষ্যতে উপযুক্ত সময়ে কিম জং–উনের সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় আছি।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি এ বছরই তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে চাই।’
গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বাণিজ্যচুক্তি হয়। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপ থেকে ছাড় পায়। তবে এখনো দুই দেশ পারমাণবিক শক্তি, সামরিক ব্যয় ও যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ কোরিয়ার ৩৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিসহ এ–সংক্রান্ত চুক্তির বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। তবে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ায় প্রমাণ হয়েছে, ওয়াশিংটন কোরীয় উপদ্বীপ দখল এবং অঞ্চলটির দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করতে চায়।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় তাঁর উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সরাসরি কূটনীতি শুরু হয়েছিল। তবে তখন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ করার মতো কোনো চুক্তি হয়নি।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় তাঁর উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সরাসরি কূটনীতি শুরু হয়েছিল। তবে তখন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ করার মতো কোনো চুক্তি হয়নি। গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেন ট্রাম্প। এর পর থেকে সরাসরি কূটনীতি আবারও শুরু করার জন্য একাধিকবার কিমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে কিম তাতে সাড়া দেননি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার হোয়াইট হাউস সফরকালে বেশ হট্টগোল হয়েছিল। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি তাঁর সফরে সে ধরনের দ্বন্দ্ব এড়াতে পেরেছেন।
হোয়াইট হাউস সফরে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি গলফ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউসের ভেতরের সাজসজ্জা ও বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি। সাংবাদিকদের লি বলেন, বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি ১৯৮৭ সালে লেখা ট্রাম্পের স্মৃতিকথা ‘ট্রাম্প: দ্য আর্ট অব দ্য ডিল’ বইটি পড়েছেন।
লি আশা প্রকাশ করেন, ট্রাম্প কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন। কোরীয় ভাষায় ট্রাম্পকে লি বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনি বিশ্বের একমাত্র বিভাজিত রাষ্ট্র কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ফেরাবেন, যেন এর মধ্য দিয়ে আপনি কিম জং–উনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। উত্তর কোরিয়ায় আপনি ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড (আবাসনব্যবস্থা) তৈরি করবেন, যেন আমি সেখানে গলফ খেলতে পারি। আর এসবের মধ্য দিয়ে আপনি সত্যিই বিশ্বের ইতিহাসে শান্তির প্রবর্তক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবেন।’
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর বলেছে, লি এবং ট্রাম্প জাহাজ নির্মাণ ও দুই নেতার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা নিয়েও আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া লি ট্রাম্পকে অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ওই সফরের সময় ট্রাম্প চাইলে কিম জং–উনের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার হোয়াইট হাউস সফরকালে বেশ হট্টগোল হয়েছিল। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি তাঁর সফরে সে ধরনের দ্বন্দ্ব এড়াতে পেরেছেন।
শীর্ষ বৈঠকের পর ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট লি বলেন, উত্তর কোরিয়াকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও তারা পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
লির দাবি, বর্তমানে বছরে ১০ থেকে ২০টি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করার মতো সক্ষমতা উত্তর কোরিয়ার আছে।