জেট স্কিতে চেপে পালানোর চেষ্টা চীনা ‘মানবাধিকারকর্মীর’, দক্ষিণ কোরিয়ায় গ্রেপ্তার

এই জেট স্কিতে চেপেই পীতসাগরের ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন কুয়োন পিয়ং
ছবি: এএফপি

জেট স্কিতে (ব্যক্তিগত স্পিডবোট) চেপে পীতসাগর হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলে পৌঁছানো এক চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ওই ব্যক্তি চীনা মানবাধিকারকর্মী কুয়োন পিয়ং (৩৫)। তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সমালোচক হিসেবে পরিচিত।

তবে ওই ব্যক্তি কুয়োন পিয়ং কি না, তার সত্যতা নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যমে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। ১৬ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্টগার্ড।
সিউলে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

কোস্টগার্ড বলেছে, ওই ব্যক্তি বাইনোকুলার ও কম্পাস নিয়ে পীতসাগরে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার পর আটকে পড়েন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনা মানবাধিকারকর্মীদের বিদেশে যাওয়া ঠেকাতে বিমানবন্দরসহ সীমান্ত-ক্রসিংগুলোয় কড়াকড়ি আরোপ করেছে বেইজিং। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেইজিংপন্থী দেশগুলোর অনেকে এখন আর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় দিতে চায় না।

গত মাসে চীনের মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী লু সিওয়েইকে লাওসে আটক করা হয়। পরে তাঁকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হন।

নিয়মিত ভ্রমণপথগুলোয় কড়াকড়ি জারি থাকায় চীনা নাগরিকদের অনেকে জেট স্কিতে করে সাগরপথে পালানোর চেষ্টা করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্টগার্ড বলেছে, ওই ব্যক্তি একটি লাইফজ্যাকেট ও একটি হেলমেট পরে ছিলেন। ১৮০০ সিসির ওই জেট স্কির পেছনে পাঁচ ব্যারেল জ্বালানি নিয়ে তিনি রওনা করেছিলেন। পথে তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী জ্বালানি ভরে খালি পাত্রগুলো সাগরে ফেলে দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্টগার্ড আরও বলেছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় ইনচিওন বন্দরের একটি ক্রুজ টার্মিনালের কাছে ওই চীনা নাগরিক সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন। তিনি তখন সাহায্যের আবেদন জানান।

কোস্টগার্ড ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি। তারা বলেছে, অবৈধভাবে ওই শহরে প্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাঁকে গুপ্তচর বলে সন্দেহ করা হচ্ছে না। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ডায়ালগ চায়নার দক্ষিণ কোরিয়ার সদস্য লি দায়ে-সেয়ন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, কুয়োন পালিয়ে এসেছেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সমালোচনা করায় চীনে কারাবন্দীও ছিলেন কুয়োন। ধারণা করা হচ্ছে, আশ্রয় চাওয়ার জন্য অন্য দেশে যাওয়ার জন্য প্রচলিত ভ্রমণপথগুলো ব্যবহারের সুযোগ তাঁর ছিল না। তাঁর ওপর ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞাও থাকতে পারে।

লি দায়ে-সেয়ন মনে করেন, ২০১৬ সাল থেকে চীনা কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে বাঁচতে কুয়োন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমিয়ে ছিলেন।

লি দায়ে-সেয়ন বলেন, শরণার্থীর স্বীকৃতি পেতে  দক্ষিণ কোরিয়ায়, নাকি অন্য কোনো দেশে আবেদন করবেন, তা নিয়ে ভাবছেন কুয়োন। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিবছর হাতে গোনা কয়েকটি আবেদনপত্র মঞ্জুর করা হয়।