মিয়ানমারে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে জান্তা
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণের পর মিয়ানমারের জান্তা এখন বেশ কঠিন সময় পার করছে। বলা যায়, জান্তা এখন বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে।
এরই মধ্যে জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীরা আট হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার দখল নিয়েছেন। গত অক্টোবর থেকে বিদ্রোহী কয়েকটি গ্রুপ জোটবদ্ধ হয়ে চারটি বড় ধরনের হামলা চালিয়ে এসব অঞ্চল দখল করে। গতকাল ইউরেশিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৭ অক্টোবর তিনটি জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) , দ্য তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং দ্য আরাকান আর্মি (এএ) সমন্বিতভাবে শান রাজ্যে জান্তাদের বিরুদ্ধে হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে রাখাইন রাজ্যের যোদ্ধারাও আছেন।
এরপর দ্বিতীয় হামলাটি চালানো হয় ৭ নভেম্বর। কায়াহ রাজ্যে কারেনি প্রতিরোধ বাহিনী অন্তত দুটি সামরিক চৌকি দখল করে নেয়। কায়াহ রাজ্যকে স্বাধীন করার পাশাপাশি জান্তাবিরোধীরা যাতে নেপিডোর নিকটবর্তী শহর পিয়ানমানার দিকে অগ্রসর হতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়।
গত সোমবার রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি যুদ্ধবিরোধী চুক্তি লঙ্ঘন করে জান্তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা চালায়। একই দিন চিন রাজ্যেও সফল হামলা চালান বিদ্রোহী যোদ্ধারা। এর পাশাপাশি তাঁরা অনেক এলাকাও দখল করে নেন।
সশস্ত্র বিদ্রোহী কয়েকটি বাহিনী প্রথমবারের মতো যৌথভাবে হামলা চালিয়ে গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃ স্থাপনের ভিত তৈরি করছে। এসব হামলার কারণে স্থানীয় অনেক মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে বিশ্ব মঞ্চে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার বিষয়টি উঠে আসছে।
এসব হামলার ফলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো এখন কার্যত বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে এবং সামরিক বাহিনীও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় গত কয়েক সপ্তাহে শান রাজ্য, কায়াহ, চিন, রাখাইন ও মোন রাজ্যে এবং সাগাইং এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলে আনুমানিক ৪৪৭ জান্তা বাহিনীর সদস্য অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে।
জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো যখন মিয়ানমারের মূলকেন্দ্র বিশেষ করে মান্দালয়ের উত্তরে হামলা চালাবে, তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। এখন দেখার বিষয়, বিদ্রোহীদের এই সফলতাগুলো মিয়ানমারের বিরোধী দলগুলোকে তাদের (বিদ্রোহী) সঙ্গে যোগ দিতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি জান্তা সরকারের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে কি না।
এদিকে জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্যের সরকারের (এনইউজি) প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউ ই মন একক জাতীয় কৌশলের অধীনে সারা দেশে প্রতিরোধ হামলার বিষয়টি সমন্বয় করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই লড়াই ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দাদের মানবিক পরিস্থিতি খারাপের দিতে যাবে। সাম্প্রতিক এসব হামলার আগেই ইতিমধ্যে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছে। এসব মানুষ যেসব শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে, সেগুলোকেও লক্ষ্য করে এখন জান্তারা বিমান থেকে বোমা ফেলছে।