ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কেন ‘পুরুষদের ক্লাবে’ পরিণত হয়েছে

ভারতের সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত (সুপ্রিম কোর্ট) ও কিছু উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) সম্প্রতি নতুন বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। এসব আদালতে নারী বিচারপতির সংখ্যা খুবই কম।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। ছবিতে দেখা যায়, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার দুই পাশে চার নারী বিচারপতি দাঁড়িয়ে আছেন। সে সময় ৩৪ সদস্যের সর্বোচ্চ আদালতে সবচেয়ে বেশি নারী বিচারপতি ছিলেন। তাই ওই সময়টাকে ‘ঐতিহাসিক সময়’ ধরা হয়ে থাকে।

অনেকেই ওই সময়কে ভারতের শীর্ষ আদালতের জন্য যুগান্তকারী সময় হিসেবে দেখেছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতে লিঙ্গবৈষম্য কমাতে এটি সাহায্য করবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন অনেকে।

কিন্তু চার বছর পর সেই আশা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আইনজীবী স্নেহা কালিতার মতে, সর্বোচ্চ আদালত আবারও ‘পুরুষদের ক্লাবে’ পরিণত হয়েছে।

বিচারপতি এন ভি রামানার সঙ্গে সেই ছবিতে থাকা বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জি, হেমা কোহলি ও বেলা এম ত্রিবেদি এরই মধ্যে অবসরে গেছেন। এর পর থেকে আর কোনো নারী বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এখন ভারতের শীর্ষ আদালতে নারী বিচারপতি মাত্র একজন। তিনি বি এ ভি নাগরাথনা।

স্নেহা কালিতা নারী আইনজীবী সংস্থার একজন সদস্য। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি বিপর্যয় ছাড়া আর কিছুই নয়।’ নারী বিচারপতির সঠিক প্রতিনিধিত্বের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন করেছেন স্নেহা।

ঐতিহাসিকভাবে ভারতের বিচারব্যবস্থা ছিল পুরুষদের দখলে। ১৯৫০ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর দেশটিকে একজন নারী বিচারপতি পেতে ৩৯ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অবশেষে ১৯৮৯ সালে ফাতিমা বিবি ভারতের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

ফাতিমা বিবি ২০১৮ সালে সংবাদমাধ্যম স্ক্রলকে বলেন, ‘আমি একটি বন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছি।’ কিন্তু গত ৭৫ বছরে হাতে গোনা কয়েকজন নারী ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হয়েছেন। এই দীর্ঘ সময়ে ২৮৭ জন বিচারপতির মধ্যে নারী মাত্র ১১ জন বা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

স্নেহা কালিতা বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতে আমাদের প্রতিনিধিত্ব আবার শূন্যের কোঠায় নেমেছে। বর্তমানে নারী বিচারপতি মাত্র একজন। এটি সত্যিই পুরুষদের একটি ক্লাবে পরিণত হয়েছে।’

উচ্চ আদালতগুলোয়ও নারীদের সংখ্যা কম। ৬৭০ জন পুরুষের বিপরীতে সেখানে নারী বিচারপতি মাত্র ১০৩ জন। অন্তত চারটি উচ্চ আদালতে কোনো নারী বিচারপতি নেই।

সুপ্রিম কোর্টে সর্বশেষ বিচারপতি নিয়োগের পর সেখানে নারীদের কম প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির দুটি পদ শূন্য ছিল। এ দুই পদে সরকারের কাছে নাম প্রস্তাব করে প্রধান বিচারপতি ও চার জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত কলেজিয়াম। এবার নতুন বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়াম লিঙ্গবৈষম্য কমাবে বলে প্রত্যাশা ছিল।

কিন্তু আগস্টের শেষ দিকে উচ্চ আদালতের দুই পুরুষ বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতে এমন তিন নারী বিচারক ছিলেন, যাঁদের বয়স ও অভিজ্ঞতা ওই দুই পুরুষ বিচারকের চেয়ে বেশি ছিল।

কলেজিয়ামের অন্যান্য সাম্প্রতিক নাম প্রস্তাবেও নারীরা উপেক্ষিত হয়েছেন। গত সপ্তাহে বোম্বে উচ্চ আদালতে ১৪ জন নতুন বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে নারী মাত্র একজন। এলাহাবাদ উচ্চ আদালতে প্রস্তাবিত ২৬ প্রার্থীর তালিকায় নারী মাত্র পাঁচজন।

ভারতের শীর্ষ আদালত ও অন্যান্য উচ্চ আদালতে নারীদের কম প্রতিনিধিত্বের কারণে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এসসিবিএ) এক বিবৃতিতে ‘গভীর হতাশা’ ও ‘গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।

এসসিবিএ সভাপতি বিকাশ সিং বিবিসিকে বলেন, ‘নিম্ন আদালতে ৪০ শতাংশই নারী বিচারক। সেখানে মেধা, লিখিত পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতে, যেখানে কলেজিয়ামের মাধ্যমে বিচারপতি নির্বাচন করা হয়, সেখানে নারী বিচারপতি মাত্র ১০ শতাংশ। এ অবস্থার পরিবর্তনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আরও বেশি নারী বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’