উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার হুমকি সামাল দিতে ঐতিহাসিক এক চুক্তিতে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া। একই সঙ্গে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে দেশ দুটি বলেছে, উত্তর কোরিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্র বা দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর পারমাণবিক হামলা চালায়, তবে দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং-উনের শাসনের সমাপ্তি ঘটবে।

উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে এমন হুঁশিয়ারি এল, যখন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। ছয় দিনের এই সফরে তিনি দেখা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। আলোচনা হয়েছে যৌথ নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে। সেখানেই গতকাল বুধবার দুই দেশের মধ্যে নতুন চুক্তিটি হয়েছে।

চুক্তিতে কী আছে?

চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত সাবমেরিন মোতায়েন করবে ওয়াশিংটন। গত শতকের আশির দশক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ঘিরে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ওয়াশিংটন। তবে দেশটিতে সরাসরি কোনো পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের কথা বলা হয়নি চুক্তিতে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরিকল্পনা কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে সিউলকে। বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন না করতে রাজি হয়েছে।

তবে উত্তর কোরিয়াকে কোণঠাসা করতে এই চুক্তি কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের অনেকের। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেজং ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়া স্টাডিজের চেওং সেওং-চ্যাং বলেন, ৭ হাজার ৪০০ কিলোমিটারের বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত সাবমেরিনের ভয় উত্তর কোরিয়া পাবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, ‘অত্যধিক বেশি’ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যদি দক্ষিণ কোরিয়ার জলসীমায় মোতায়েন থাকে, তার অর্থ সেগুলোর উত্তর কোরিয়ায় আঘাত হানার সক্ষমতা না-ও থাকতে পারে।

চুক্তি সইয়ের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউল
ছবি: রয়টার্স

গুরুত্ব কতটা?

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউন সুক-ইওলের সফর এবং ওয়াশিংটন-সিউল চুক্তির বড় গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। যেমন ইওয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লেইফ-এরিক এসলে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় এই সফর নিঃসন্দেহে নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক উচ্চপর্যায়ে পৌঁছানোর বিষয়টিকেই তুলে ধরেছে।

এদিকে গত শতকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সামাল দিতে ইউরোপের পাশে দাঁড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই ঘটনার সঙ্গে নতুন এই চুক্তির মিল দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।

উত্তর কোরিয়া কী করবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে এই চুক্তি কিম জং-উনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এর জবাবে উত্তর কোরিয়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা চুন ইন-বাম বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত সাবমেরিন মোতায়েনে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসকে সামনাসামনি ছোট করে দেখবে উত্তর কোরিয়া। তবে আড়ালে তারা এটা ঠিকই বুঝতে পারবে যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে তাদের শেষ করে দেওয়া হতে পারে।

তবে এরপরও উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়ন থামাবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন সিউলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়া স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট ইয়াং মু-জিন। তাঁর মতে, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির পর নতি স্বীকার করে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বন্ধ করবে—এমন সম্ভাবনা কম।

আরও পড়ুন

উত্তর কোরিয়াকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র–দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি সই