ভারতের প্রতিবেশীদের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন আসলে কেমন

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় গণতন্ত্রের দেশ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভারত উপমহাদেশের ওপর অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের চারপাশের প্রতিবেশীরা এখন কেমন আছে, তা নিয়ে দেশটির একটি গণমাধ্যম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শিশির গুপ্তার সেই প্রতিবেদনে পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

পাকিস্তান সম্প্রতি আরও একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণখেলাপি হওয়ার পথে শ্রীলঙ্কা। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা নেপাল তার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে সরিয়ে দিয়েছে। কোভিডে নানা নিষেধাজ্ঞায় চীনের অর্থনীতিতে আবার প্রভাব ফেলেছে। ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে একটি সংকট তৈরি হচ্ছে। ভারতের কিছু প্রতিবেশী দেশগুলো অর্থনীতির বিষয়ে উদ্বিগ্ন। দেশগুলোয় এখন কী ঘটছে, তা দেখে নেওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশও আইএমএফের কাছে ঋণ চাইছে। কলম্বোর পর ইসলামাবাদ একই পথে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই ফুরিয়ে আসার ফলে ইসলামাবাদও ঝুঁকিতে। মিয়ানমার, মালদ্বীপ, এমনকি নেপালের অবস্থাও ভালো নয়। দ্রুত আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। তিনি এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের কাছে সহায়তা চেয়ে বলেছেন, তাঁর দেশ ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি মোকাবিলা করছে। তাই ১৫০ কোটি ডলারের সহায়তা যেন আইএমএফ তাড়াতাড়ি ছাড় দেয়, সে জন্য শেরম্যানের সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এদিকে কলম্বোকে আরও ত্রাণ (রিলিফ) অনুমোদন দেওয়ার আগে তাদের কাছ থেকে নীতি কাঠামোর জন্য অপেক্ষা করছে বিশ্বব্যাংক। এ সময়ে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ।

ভারতের অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত সাংবাদিক শিশির গুপ্তার এ প্রতিবেদনে ‘ব্রেটন উডস’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ব্রেটন উডস হলো অর্থ ব্যবস্থাপনার একটি পন্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে রাশিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে গ্যাস সরবরাহ শতকরা ২০ ভাগ কমিয়েছে। লাটভিয়ায় গ্যাস বন্ধ করেছে। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মস্কোর ওপর কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক উত্তাপ দেখা যাচ্ছে না। এর অর্থ হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। তবে এরই মধ্য আশার কথা হলো, গতকাল সোমবার ইউক্রেন ছেড়েছে পণ্যবাহী জাহাজ। ওই জাহাজে ২৬ হাজার টন ভুট্টা ছিল। এ যুদ্ধের ফলে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং খাদ্যসংকট চলবে। এতে অর্থনৈতিক সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে।

এসব পরিস্থিতিতে বলা যায়, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোয় অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে যেকোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেমনটা শ্রীলঙ্কায় দেখা গেছে। অশান্ত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিস্ফোরণে পরিণত হতে পারে প্রতিবেশী দেশগুলো। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষে উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন জেনারেল কামার বাজওয়া। পাকিস্তানের এ উদ্যোগকে অতটা গুরুত্ব এখন আইএমএফ দেবে কি না, তাই দেখার বিষয়। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার কোনো সুযোগ রাখেননি, তবে ওয়াশিংটনের সাহায্য চাওয়া ছাড়া ইসলামাবাদের হাতে কোনো বিকল্পও নেই। অন্যদিকে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীনও তাদের সাহায্য করার মতো অবস্থানে নেই। বৈদেশিক ঋণের শতকরা কমপক্ষে ২৫ ভাগ চীনের কাছ থেকে এরই মধ্য নিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান।

চীনের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র শ্রীলঙ্কা। ব্যাপক ব্যাষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি কাঠামো না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নতুন করে অর্থায়ন প্রত্যাখ্যান করেছে বিশ্বব্যাংক। ফলে সেখানে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ব্যাষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি কাঠামোতে আমূল সংস্কার প্রয়োজন, যা দৃষ্টি দেবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায়। একই সঙ্গে কী কারণে এই অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার মূল কারণ শনাক্ত করবে, যাতে শ্রীলঙ্কার পুনরুদ্ধার স্থিতিস্থাপক এবং অংশগ্রহণমূলক হয়।

তবে ঢাকার পরিস্থিতি অতটা ভয়াবহ নয়। কিন্তু ব্যাংক থেকে এক ডলারের সরকারি ক্রয়মূল্য এবং কালোবাজার থেকে এক ডলারের ক্রয়মূল্যের পার্থক্য শতকরা ৮ ভাগ। এতে অর্থনৈতিক হতাশার চাপ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কান রুপিকে ‘ক্রাশ’ করেছে ডলার। তার বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার অবস্থান ধরে রেখেছে। এ অবস্থায় খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে ঢাকা। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আর ভারত নেপালের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে না দেওয়ার চেষ্টাই করে যাবে। দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে যে আর্থিকভাবে বিচক্ষণ হওয়া এবং চীন থেকে ঋণ নিয়ে গর্বিত না হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক জান্তার অধীন একই অবস্থা মিয়ানমারেও। তারাও অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে মালদ্বীপ।