বন্দুক হামলায় নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে দুয়ো

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ। বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ। এক সপ্তাহ আগে এ সৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে দুই বন্দুকধারীর হামলায় ১৫ জন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছিলেন।

ওই বন্দুক হামলার স্মরণে রোববার অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

১৪ ডিসেম্বর হামলা শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে। রোববার ঠিক একই সময়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বন্ডাই সৈকতে আয়োজিত শোক অনুষ্ঠানে আলবানিজসহ দেশটির অন্য নেতারা অংশ নেন। হাজার হাজার মানুষের এ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আশপাশের ভবনের ছাদে স্নাইপার এবং সমুদ্রে নৌ-পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

আলবানিজ বন্ডাই সৈকতে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে দর্শকেরা দুয়োধ্বনি দিতে শুরু করেন। স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তাদের নামের তালিকায় আলবানিজের নাম ছিল না। কিন্তু একপর্যায়ে বক্তৃতার জন্য তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। তাঁর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকসারি থেকে আবারও দুয়োধ্বনি ওঠে। অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে বসা আলবানিজের মাথায় ইহুদিদের ঐতিহ্যবাহী টুপি ‘কিপ্পা’ দেখা গেছে।

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার শুরুর পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ বেড়েছে। এটা নিয়ে শুরু থেকে আলবানিজের মধ্য-বামপন্থী সরকার চাপে ছিল। বন্ডাই হামলার পর তা আরও বেড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাড়বাড়ন্ত ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ন্ত্রণে আলবানিজ সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি।

স্মরণ অনুষ্ঠানে হাজারো শোকার্ত মানুষ অংশ নেন
ছবি: এএফপি

কিন্তু সরকার বলেছে, তারা গত দুই বছরে ধারাবাহিকভাবে ইহুদিবিদ্বেষের নিন্দা জানিয়েছে এবং ঘৃণামূলক বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে আইন পাস করেছে। ইহুদিবিদ্বেষ থেকে করা দুটি অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তেহরানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলে চলতি বছরের শুরুতে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে আলবানিজ সরকার।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তৃতায় নিউ সাউথ ওয়েলসের জিউয়িশ বোর্ড অব ডেপুটিজের প্রেসিডেন্ট ডেভিড অসিপ বলেন, ‘আমরা নিরাপদ থাকার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি…। গত সপ্তাহ আমাদের নিরাপদ থাকার অনুভূতি কেড়ে নিয়েছে।’

ইহুদি জনগোষ্ঠীর এই নেতা বলেন, ‘বন্ডাইয়ের এই ঘাসের মতো আমাদের জাতির গায়েও রক্তের দাগ লেগেছে। আমরা এক অন্ধকার জায়গায় এসে পড়েছি। কিন্তু বন্ধুরা, হানুক্কার শিক্ষা হলো—আলো ঘোরতর অন্ধকার স্থানকেও আলোকিত করতে পারে। একটি সাহসী পদক্ষেপ, আশার একটি আলোকচ্ছটা আমাদের পথ নির্দেশ করতে এবং দিশা দেখাতে পারে।’

দুই বন্দুকধারীর একজনকে নিরস্ত্র করেছিলেন আহমেদ আল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। গুলিবিদ্ধ আহমেদ এখন বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন। স্মরণ অনুষ্ঠানে তাঁর বাবা উপস্থিত ছিলেন।

বন্দুক হামলা হয়েছিল হানুক্কা উৎসবের প্রথম দিন। রোববার ছিল ইহুদিদের বার্ষিক উৎসবটির অষ্টম ও শেষ দিন। হামলার স্মরণে ঘরে ঘরে মোমবাতি প্রজ্বলিত করতে নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

স্মরণ অনুষ্ঠানে হামলায় আহত ১৪ বছর বয়সী চায়া দাদোন বলেন, ‘একটি জাতি হিসেবে আমরা শক্তিশালী হচ্ছি। আমরা বিকশিত হচ্ছি। বিকশিত হতে গিয়ে আমরা কখনো কখনো আঘাত পাই...কিন্তু জীবন এগিয়ে চলে। তাহলে কেন আমরা সেরা জীবনটা যাপন করব না?’

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনার ঘোষণা দেন আলবানিজ। এর আগে তিনি নিজেদের অস্ত্র আইন আরও কঠোর করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এদিকে রোববার সকালে সিডনি ও মেলবোর্নে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এ বিক্ষোভে মাত্র ২০০–এর মতো মানুষ অংশ নিয়েছেন। আলবানিজ এসব বিক্ষোভের সমালোচনা করেছেন।

বন্ডাই সৈকতের বন্দুক হামলায় অংশ নেওয়া দুজন সম্পর্কে বাবা–ছেলে। এর মধ্যে ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরামকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। আর তাঁর ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরাম ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সাজিদ আকরামের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাসবাদসহ ৫৯টি অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।