থাইল্যান্ডের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ফুকেট দ্বীপ। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক বেড়াতে যান এখানে। এ বছর দ্বীপটিতে রাশিয়ান পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শুধু ভ্রমণ নয়, রুশ পর্যটকেরা থাইল্যান্ডে জায়গা-জমি কিনে দোকানপাট খুলে বসেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ছুটি কাটাতে রুশ নাগরিকদের পছন্দের তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ড। ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশটিতে রুশ পর্যটকের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত জুলাই পর্যন্ত চার লাখের বেশি রুশ পর্যটক থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের পরে পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে।

অনেক রুশ পর্যটক দীর্ঘমেয়াদি ভিসা পেয়েছেন। আর এই সুযোগে থাইল্যান্ডে জায়গা-জমি কিনে ব্যবসা শুরু করেছেন তাঁরা। মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতির দুরবস্থার কারণে রাশিয়ানরা এখন থাইল্যান্ডের দিকে ঝুঁকছেন।

পর্যটক বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে রাশিয়া। গত জুলাই মাসে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ফুকেট সফর করেন। এ সময় দ্বীপটিতে রাশিয়ার নতুন কনস্যুলেট উদ্বোধন করেন তিনি।

গত জুলাই মাসে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ফুকেট সফর করেন। এ সময় দ্বীপটিতে রাশিয়ার নতুন কনস্যুলেট উদ্বোধন করেন তিনি।

রাশিয়ানদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপের স্বাভাবিক চিত্র দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। জায়গার দাম বাড়ছে হু হু করে। এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আশীর্বাদ হলেও দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা বিপাকে পড়েছেন। বেড়াতে এসে পছন্দমতো জায়গা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে তাঁদের জন্য।

পর্যটক বাড়ার পাশাপাশি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যবসা-বাণিজ্যর দ্রুত উত্থান ঘটছে। ব্যবসার সুবিধার জন্য রুশ ভাষায় তৈরি অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনবহির্ভূতভাবে অনেককে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। রাশিয়ার যৌনকর্মীদেরও আনাগোনা বাড়ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ছুটি কাটাতে রুশদের পছন্দের তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ড
ছবি: রয়টার্স

রুবলে লেনদেন
ফুকেটে ২০০ মিনিবাস মালিকদের নিয়ে গড়ে উঠেছে ফুকেট ভ্যান ড্রাইভারস ক্লাব নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট প্রায়ুত থংমুসিক বলেন, ‘পুরো পর্যটন খাত রাশিয়া থেকে আসা মানুষদের ঘিরে পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

প্রায়ুত থংমুসিক আরও বলেন, ‘তাঁরা (রুশ নাগরিকেরা) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নেওয়া ছাড়াই ব্যক্তিগত গাড়ি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছেন। রাশিয়ান অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের চেয়ে ২০ শতাংশ কমে পর্যটকদের ভ্রমণসুবিধা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে নিজেদের মুদ্রা (রুবল) তাঁদের কাছেই রাখছেন।’

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব পোস্টে রুশ নাগরিকদের কারণে চাকরি হারানোর আশঙ্কা করেছেন তাঁরা।।

অনেকে বিভিন্ন ফেসবুকে পেজে রাশিয়ান ট্যাক্সি ও পিকআপের ছবি দিয়েছেন, সেগুলোতে রুশ নাগরিকেরাই কাজ করছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এরকম এটি পোস্টের নিচে একজন লিখেছেন, ‘রুশ নাগরিকেরা আমাদের চাকরি চুরি করছেন। এখনই থামানো না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

আরও পড়ুন

থাইল্যান্ড ভ্রমণে কর দিতে হবে ৩০০ বাথ

রুশ নাগরিকের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপের স্বাভাবিক চিত্র দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে গত মাসে বেশ কয়েকজন অবৈধ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে ফুকেট পুলিশ। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল থংচাই মাতিতাম বলেন, একজন থাই নাগরিকের অভিযোগের ভিত্তিতে সেলুন চালু করায় তিন রুশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে থাইল্যান্ডের চাকরিবিধি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।

তাঁরা (রুশ নাগরিকেরা) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নেওয়া ছাড়াই ব্যক্তিগত গাড়ি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছেন। রাশিয়ান অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের চেয়ে ২০ শতাংশ কমে পর্যটকদের ভ্রমণসুবিধা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে নিজেদের মুদ্রা (রুবল) তাঁদের কাছেই রাখছেন।
প্রায়ুত থংমুসিক, প্রেসিডেন্ট, ফুকেট ভ্যান ড্রাইভারস ক্লাব

পর্যটন ব্যবসায় রুশদের উত্থান যেমন ঘটছে, পাশাপাশি দ্বীপটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটেছে। গত ৮ জুন ব্যস্ত একটি রেস্তোরাঁর সামনে গাড়িতে বসা অবস্থায় রুশ ব্যবসায়ী দিমিত্রি আলিনিকভের ওপর গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কাজাখস্তানের এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে ফুকেটের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।

থাইল্যান্ডে অনেক রাশিয়ান বৈধভাবে ব্যবসা করছেন। তাঁদের একজন সের্গেই মালিনিন। প্রায় ২৫ বছর ধরে থাইল্যান্ডে ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, অপরাধীদের দেখে রাশিয়ান মনে হলেও তারা সবাই রুশ নাগরিক নন। উজবেকিস্তান, ইউক্রন ও জর্জিয়ার নাগরিকদেরও থাই লোকজন রুশ নাগরিক মনে করেন।

ফুকেটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে
ছবি: রয়টার্স

সের্গেই মালিনিন আরও বলেন, থাইল্যান্ডে কাজের অনুমতি না পাওয়ার কিছু কিছু রুশ নাগরিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। আবার চাইলেও কাজের ভিসার অনুমতি পাওয়া যায় না। তারা চাকরি খুঁজতেও পারেন না। বাধ্য হয়ে তাঁরা আইনভঙ্গ করেন।

ফুকেটে বিলাসবহুল নৌকা ও ইয়ট বিক্রি করে ‘সিম্পসমমেরিন ফুকেট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা বলেছে, তাদের নৌকার সবচেয়ে বড় ক্রেতা রুশ নাগরিকেরা। তাঁদের কাছে লাখ লাখ ডলারের ইয়ট বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইউক্রেন যুদ্ধের পর ১০ থেকে ২০ শতাংশ রাশিয়ান ক্রেতা বেড়েছে তাদের।

থাইল্যান্ডের স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গত ১৫ আগস্ট রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে রোড শো করতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে ফুকেট ট্যুরিস্ট অ্যাসোসিয়েশন।

রুশ নাগরিকেরা থাইল্যান্ডে বাড়িও করতে চাইছে। এ কারণে থাইল্যান্ডের আবাসনের দাম বাড়ছে। ফুকেটে রাশিয়ার প্রপার্টি এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন সোফিয়া মালাইগায়েভা। তিনি বলেন, ফুকেটে জায়গার স্বল্পতা আছে। এ কারণে দ্বীপে আবাসনের দাম বাড়ছে। রাশিয়ার অনেক ক্রেতা তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিরাপদে রাখতে ফুকেটকে বেছে নিচ্ছেন। আবার রাশিয়াতেও তাঁরা গোপনে ব্যবসা করছেন। তাঁরা ফুকেটকে নিরাপদ মনে করছেন।

আরও পড়ুন

দেশে আগ্রহ কক্সবাজার, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম আর বিদেশে ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল