রাখাইনসহ তিন প্রদেশ ও দুটি অঞ্চলে বিদ্রোহীদের কাছে আরও ঘাঁটি হারিয়েছে সামরিক জান্তা
মিয়ানমারের পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর (ইএও) বিদ্রোহীরা গত চার দিনে জান্তা বাহিনীর আরও ঘাঁটি দখল করেছে। দেশজুড়ে বিদ্রোহীরা অব্যাহতভাবে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাখাইন, কাচিন ও মন প্রদেশ এবং সাগাইং ও বাগো অঞ্চলে জান্তা বাহিনী এসব ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারায়।
পিডিএফ ও ইএওর বিদ্রোহীদের তরফে এসব খবর জানিয়েছে ইরাবতী। তবে ইরাবতী নিরপেক্ষভাবে হতাহত ও ঘাঁটি দখলের এসব খবর যাচাই করতে পারেনি।
আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, তিন দিন লড়াইয়ের পর তারা কাচিন প্রদেশের মান্দালয়-মিতকিনিয়া সড়কে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেনাঘাঁটি দখল করেছে।
এএ জানায়, কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি (কেআইএ) ও কাচিন রিজিওনাল পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (কেআরপিডিএফ) বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে মানসি শহরের শিখাঙ্গি এলাকার ঘাঁটি দখল করেছে তারা। জান্তার পদাতিক ব্যাটালিয়ন ২৭৬ ও ২২৩-এর সেনাসদস্যরা প্রায় ৩০ বছর ধরে ওই ঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন।
বিদ্রোহীরা দাবি করেছে, ঘাঁটিটি রক্ষা করতে জান্তা বাহিনী ৬০টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছিল। এতে অন্তত ৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১৫ জনের বেশি আহত হন।
রাখাইনে আরেক ঘাঁটি দখল
এএ দাবি করেছে, রাখাইন রাজ্যের মংডুতে তারা সামরিক জান্তার আরেকটি ঘাঁটি দখল করেছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি মংডু শহরের পায় ইউন তাং এলাকার ওই ঘাঁটি তারা দখল করেছে। সকাল সাতটার দিকে তারা ঘাঁটিতে হামলায় এবং নয় ঘণ্টা লড়াইয়ের পর তারা সেটি দখল করে।
এএ দাবি করেছে, সংঘর্ষ চলাকালে জান্তার একটি যুদ্ধবিমান থেকে ওই এলাকার আশপাশে বোমাবর্ষণ করা হয়। এএ বিদ্রোহীরা ঘাঁটি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে। সেখানে জান্তা বাহিনীর ১০ সদস্যের মরদেহ পাওয়া গেছে।
এএ বলছে, ঘাঁটি থেকে আশপাশের এলাকা ও বনে পালিয়ে যাওয়া জান্তার অন্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
সামরিক জান্তা সিত্তেউই, পোনাকিউন, রাথেডং, রাম্রি, কিয়াউকপিউ ও অ্যান শহরের বেসামরিক এলাকায় আকাশ থেকে হামলা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে গোলাবারুদ নিক্ষেপ করছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গৃহপালিত পশু ও বাড়িঘর পুড়ে গেছে।
মন প্রদেশে সেনা কমান্ড সদর দপ্তরে বোমা হামলা
ইয়ে গেরিলা ফোর্স (ওয়াইজিএফ) জানায়, গত সোমবার মন প্রদেশের ইয়ে শহরের মিলিটারি অপারেশন কমান্ড সেন্টার–১৯-এর সদর দপ্তরের সেনা কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা।
ড্রোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। আহত সৈন্যদের হাসপাতালে নিতে একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। জান্তার কত সদস্য হতাহত হয়েছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
ওয়াইজিএফ জানায়, তাদের ড্রোন হামলার পর সামরিক সদর দপ্তর থেকে আশপাশের এলাকায় এলোপাতাড়ি গোলা ও অন্তত ৫০টি শক্তিশালী বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হয়।
সাগাইংয়ে বিদ্রোহীদের বোমা হামলা
দ্য এরিয়া৭১–কে পিডিএফ জানায়, গত সোমবার সাগাইং অঞ্চলের মনিওয়া শহরে মনিওয়া-চাউং-ইউ সড়কের একটি সেনাঘাঁটিতে বোমা হামলা চালিয়েছে তারাসহ আরেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পিডিএফ আরও জানায়, জান্তা বাহিনীর কত সদস্য হতাহত হয়েছেন, সেটা জানা যায়নি। ওই সড়ক ব্যবহার করে জান্তার সদস্যরা বেসামরিক নাগরিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিত।
গত শনিবার সাগাইং অঞ্চলের মাইনমু শহরের জিওয়ে পিন তাউ এলাকায় পিডিএফের পাঁচটি গ্রুপ জান্তা বাহিনীর ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায়।
বাগোতে দুই জান্তা নিহত
বাগো অঞ্চলের ইয়েদাশে শহরের সিত্তাউং নদীর ওপর নির্মিত কাইউই ইয়াইন পাইন ব্রিজে শনিবার পিডিএফের সমন্বিত হামলায় জান্তা বাহিনীর দুই সদস্য নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচজন।
সেখানে ড্রোন হামলার পর সামরিক ঘাঁটি থেকে ১২০-এমএম মর্টার ব্যবহার করে আশপাশের এলাকায় গোলা নিক্ষেপ করা হয়। তবে বেসামরিক কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।