মিয়ানমারে মঠে হামলা চালিয়ে ২১ জনকে হত্যা: কেএনডিএফ

জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে শান রাজ্যে সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়
ছবি দ্য কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স–এর ফেসবুক থেকে

মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শান রাজ্যের একটি মঠে সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। গত শনিবার নান নেইন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পাশের গ্রামে নিহত হয়েছেন সাতজন। দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী দ্য কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) এ তথ্য জানিয়েছে।

দুই বছর আগে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জান্তা দেশটির ক্ষমতা দখল করার পর থেকে সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

কেএনডিএফের ভাষ্য, শনিবার গোলা নিক্ষেপের পর স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে বিমান বাহিনী ও আর্টিলারি বাহিনী গ্রামে ঢুকে পড়ে। এরপর তারা মঠের ভেতরে লুকিয়ে থাকা গ্রামের বাসিন্দাদের বাইরে এনে হত্যা করেন।

কেএনডিএফের পক্ষ থেকে দেওয়া এক ভিডিওতে ২১টি মরদেহ দেখা যায়, যার মধ্যে ৩টি বৌদ্ধ ভিক্ষুর, তাঁদের পরনে ছিল কমলা রঙের পোশাক। মরদেহগুলো মঠের বাইরে স্তূপ করে রাখা। মরদেহগুলোয় একাধিক গুলির আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভিডিওতে দেখা গেছে মঠের দেয়ালগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে।

স্থানীয় পত্রিকা দ্য কান্তরাওয়াদ্দি টাইমস কেএনডিএফের এর মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, মনে হচ্ছে সেনারা মঠে ঠাঁই নেওয়া লোকজনকে সেখান থেকে বের করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করেছেন। যাঁদের হত্যা করেছেন, তাঁদের মধ্যে ভিক্ষুরাও রয়েছেন।

ওই গোষ্ঠী বিবিসিকে জানিয়েছে, পাশের একটি ছোট গ্রামে তারা আরও সাতজনের মরদেহ দেখতে পেয়েছে। আশপাশের কয়েকটি ভবন ও ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। কেএনডিএফ জানায়, এগুলো সামরিক বাহিনীর কাজ।

গোষ্ঠীটির ভাষ্য, গোলাগুলির সময় গ্রামের লোকজন ভেবেছেন তাঁদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হলো মঠ। পবিত্র এই জায়গায় অন্তত কেউ আঘাত করবে না। তবে সৈন্যরা গ্রামে ঢুকার আগে অন্যদের বের করে নেওয়া হয়েছিল।

বিস্তারিত ঘটনার সত্যতা বিবিসি যাচাই করতে পারেনি। তবে মিয়ানমারের এই অংশে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা নতুন কোনো ঘটনা নয়।

কেএনডিএফ বিবিসিকে বলে, জান্তা সেনারা ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নান নেইন এলাকা ও সেখানকার মঠের দিকে এগোতে থাকলে সেখানে সংঘর্ষ ও লড়াইয়ে ঘটনা বেড়েই চলেছে।

শান রাজ্য থেকে কায়াহ রাজ্যে যাওয়ার মূল সড়কে পড়ে নান নেইন এলাকাটি। জান্তাদের বিশ্বাস যুদ্ধরত বিদ্রোহী দলগুলোকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য এই রাস্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া এ এলাকায় বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, যেমন পা-ও, শাস ও কারেন্নি লোকজনের বসবাস রয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সু চি সরকারের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনার পর ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির শীর্ষ জেনারেলের নেতৃত্বে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। ওই দিন মিয়ানমারের নতুন পার্লামেন্টে অধিবেশনের প্রস্তুতি চলছিল। আর তার আগেই ভোরবেলা অভিযান চালিয়ে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিসহ আইনপ্রণেতাদের আটক করেন সেনাসদস্যরা। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার ইতি টানা হয়।

মিয়ানমারে ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে বিশৃঙ্খলা চলছে। দেশটিতে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিক্ষোভকারীরা। চলছে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন, সংঘাত, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ। তাঁদের ওপর ব্যাপক দমন–পীড়ন চালানো হচ্ছে। এদিকে গঠিত হয়েছে জান্তাবিরোধী ছায়া সরকার ও প্রতিরোধ বাহিনী। পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর জারি করেছে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, দেশটিতে ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৪০ হাজার ঘরবাড়ি পুড়েছে। ৮০ লাখ শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে এবং দেড় কোটি মানুষ তীব্র খাদ্য–সংকটে আছে।

পর্যবেক্ষণকারী গ্রুপ অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকেল প্রিজনার্স-এর তথ্য মতে, ভিন্নমতের বিরুদ্ধে জান্তার দমন–পীড়ন অভিযানে ২ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।