মিয়ানমারে বেকায়দায় জান্তা প্রধান

জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের একটি ছোট শহরে এই মাসের মাঝামাঝি এক জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন কট্টর জান্তাপন্থী হিসেবে পরিচিত ভিক্ষু পাউক কোতাও। সেখানে তিনি বলেন, জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং পদত্যাগ করবেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন উপসেনাপ্রধান সোয়ে উইন। এ কথায় সমবেত জনতা সমস্বরে করতালি দেন। জান্তাপন্থী এক ভিক্ষুর প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

পাউক কোতাও একাই নন, অনলাইনে সাধারণ জনতা, জান্তাপন্থী সাংবাদিক ও ব্লগাররাও এখন এই কথা বলছেন। কো মাউং মাউং নামে একজন ইউটিউবার সামরিক জান্তাপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি এক পোস্টে লিখেছেন, ‘সর্বাধিনায়ক হিসেবে তাঁর (হ্লাইং) এখন পদত্যাগ করা উচিত।’ অথচ দেশটির ক্ষমতাধর সশস্ত্র বাহিনী ও জান্তাপ্রধানের বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগেও জনসমক্ষে এভাবে কেউ কথা বলার সাহসই দেখাতেন না।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে এক সেনা অভ্যুত্থানে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন মিন অং হ্লাইং। এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছেন জান্তাপ্রধান।

ক্ষমতা দখলের পরপরই ব্যাপক জন-অসন্তোষের মুখে পড়ে জান্তা সরকার। তবে মিন অং হ্লাই কঠোর হাতে তা দমন করেন। বিরোধীদের দমনে জান্তার অভিযানে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে গত অক্টোবরে বিভিন্ন রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জোট বেঁধে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারানোয় হ্লাইংয়ের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ও তাঁর পদত্যাগের দাবি উঠেছে।

জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো গত তিন মাসে জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীদের কাছে অন্তত ৩৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় চীন সীমান্তে সংঘর্ষ বন্ধ হলেও দেশের অন্য অংশে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তা বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। প্রায় প্রতিদিনই বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, সামরিক বাহিনীর মধ্যে গভীর অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মিন অং হ্লাইংকে নিয়ে অসন্তোষ সবচেয়ে বেশি। তিনি ক্ষমতা ছেড়ে কবে চলে যান, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায় আছেন অনেকে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে এক হয়ে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সু চির দলের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকার (এনইউজি)। গতকাল বুধবার এনইউজি এক বিবৃতিতে বলেছে, ছয় শর্তে সামরিক জান্তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে তারা রাজি। তাদের ছয় শর্তের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীকে বেসামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা ও রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ বন্ধের মতো বিষয়গুলো আছে।

মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েল রয়টার্সকে বলেন, এখন বিভিন্ন দিক থেকে চাপের মুখে সামরিক জান্তা। দেশের বড় একটা অংশের ও কয়েক ডজন শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এখন দেখে মনে হচ্ছে, সামরিক জান্তা দুর্বল নেতৃত্ব ও মনোবলসংকটে ভুগছে।

এদিকে গতকাল বুধবার জান্তা সরকার দেশে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে। এতে জাতীয় নির্বাচন আরও পেছাল।