দেশে ফিরে কারাগারে থাকসিন, প্রধানমন্ত্রী হলেন তাঁর দলের প্রার্থী

থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও স্রেথা থাভিসিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘ ১৫ বছর স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পরপরই কারাগারের পাঠানো হয়েছে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই দেশটির পার্লামেন্টে এক ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরই দল ফিউ পার্টির প্রার্থী স্রেথা থাভিসিন।

দুর্নীতি মামলায় আগেই থাকসিনকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট। কারাগারে বন্দী হওয়া থেকে বাঁচতে তিনি ২০০৮ সালে দেশ ছেড়েছিলেন। তবে যেহেতু ফিউ পার্টি জোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে থাকসিনকে কত দিন কারাগারে থাকতে হবে, তা স্পষ্ট নয়। এমনকি তাঁর সাজা কমানো হতে পারে, এমন গুঞ্জনও উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে থাকসিনকে বহনকারী একটি উড়োজাহাজ ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় তাঁকে স্বাগত জানাতে শত শত সমর্থক বিমানবন্দরের বাইরে জড়ো হন। তাঁরা হাতে থাকা প্ল্যাকার্ড-ব্যানার নেড়ে ও গান গেয়ে থাকসিনকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় সমর্থকদের উদ্দেশেও হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তিনি।

৭৪ বছর বয়সী থাকসিন থাইল্যান্ডের দুবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, সেনাবাহিনীর পুরোনো যে শত্রুদের হাতে থাকসিনকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল, তাদের দলগুলো সঙ্গে নিয়েই জোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ফিউ পার্টি। এই শত্রুদের হাতেই থাকসিনের বোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকেও ক্ষমতা ছাড়তে হয়।

থাইল্যান্ডে থাকসিনের জনপ্রিয়তা কিন্তু কমেনি। ২০০১ সাল থেকে সব নির্বাচনে তাঁর সংশ্লিষ্ট দলগুলোই এগিয়ে ছিল। ব্যতিক্রম ছিল চলতি বছরের নির্বাচন। এবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সবচেয়ে বেশি আসন পায় প্রগতিশীল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)। সরকার গঠন করতে সমমনাদের নিয়ে সরকার গঠন করে দলটি। তবে এগিয়ে থেকেও থাইল্যান্ডের সামরিক জান্তার নিয়োগ দেওয়া সিনেটরদের বাধার মুখে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করতে বাধ্য হন এমএফপির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত।

এ নিয়ে তিন মাস ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। অবশেষে আজ পার্লামেন্টে ফিউ পার্টির নেতৃত্বাধীন নতুন জোটের নেতা স্রেথা থাভিসিন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের সমর্থনে প্রয়োজনীয় ৩৭৪ ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। গত মে মাসের নির্বাচনে এমএফপি পর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ফিউ পার্টি। এমনকি এমএফপির গঠন করা প্রথম জোটেও ছিল দলটি।

এদিকে ফিউ পার্টির গঠন করা নতুন জোট নিয়ে দলটির অনেক সমর্থকই নাখোশ। আর কোনো প্রত্যাশা থেকে জোটে থাকসিনের পুরোনো শত্রুদের নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক অ্যারন কনেলি। তিনি বলেন, ‘যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে থাকসিন রাজকীয় ক্ষমা না পান, তাহলে ফিউ পার্টির সমর্থকদের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠতে পারে যে কেন এমন একটি জোটে তাঁদের দল যোগ দিল।’