সু চিকে উৎখাতের পর মিয়ানমারের প্রথম নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে

মিয়ানমারে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ চলছেছবি: এএফপি

মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ চলছে। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে আয়োজিত প্রথম সাধারণ নির্বাচন।

আজ রোববার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ৩৩০টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে ভোট গ্রহণ চলছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান লড়াইয়ের কারণে দেশটির অনেক এলাকা ভোটের আওতার বাইরে রয়েছে।

তিন ধাপের এ নির্বাচনে আজ প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী ১১ ও ২৫ জানুয়ারি বাকি দুই দফায় ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা আছে। তবে সহিংসতা ও নিরাপত্তার কারণে মোট ৬৫টি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুন থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা টনি চেং বলেন, ‘এর মানে দাঁড়াচ্ছে, এ পর্যায়ে দেশের অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

চেংয়ের তথ্য অনুসারে, ইয়াঙ্গুনে আজ স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় (গ্রিনিচ সময় অনুযায়ী শনিবার রাত ১১টা ৩০ মিনিট) ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা হয়। সূর্য ওঠার পর থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়।

চেং আরও বলেন, ‘ভোটারদের বেশির ভাগই মধ্যবয়সী। খুব বেশি তরুণকে আমরা দেখিনি। ব্যালটের দিকে তাকালে বোঝা যায়, সেখানে বিকল্পও খুব কম। অধিকাংশ প্রার্থীই জান্তাপন্থী দলগুলোর।’

কয়েকটি পশ্চিমা দেশ, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন পক্ষ এ নির্বাচনের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, সেনাবাহিনীবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এ ভোট গ্রহণকে কোনোভাবেই স্বাধীন, সুষ্ঠু বা বিশ্বাসযোগ্য বলা যায় না।

মিয়ানমারে ২০২০ সালে সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন দল নিরঙ্কুশ বিজয় পায়। এর কয়েক মাস পর সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন সু চি। তিনি এখনো আটক রয়েছেন। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ইতিমধ্যে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং ভোটকেন্দ্র খোলার কিছুক্ষণ পরই মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে নিজের ভোট দেন
ছবি: এএফপি

জান্তাপন্থী ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে আসবে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২১ সাল থেকে শাসনক্ষমতায় থাকা জান্তা সরকার বলছে, ৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষের দেশের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুদিক থেকেই এ ভোট গ্রহণ নতুন করে এক সূচনার সুযোগ। জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ধারাবাহিকভাবে এই নির্বাচনকে জাতীয় পুনর্মিলনের পথে একটি পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরছেন।

মিন অং হ্লাইং ভোটকেন্দ্র খোলার কিছুক্ষণ পরই মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে নিজের ভোট দেন।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউলাইট অব মিয়ানমারে গতকাল শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ভোট গ্রহণ সংঘাত ও সংকটে জর্জরিত মিয়ানমারকে বদলে দেবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের আশাবাদের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করাবে।

তবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের মতে, মিয়ানমারের অনেক এলাকায় এখনো তীব্র লড়াই চলছে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, সহিংসতা ও দমন-পীড়নের পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার অধিকার কিংবা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মৌলিক অধিকার চর্চার কোনো পরিবেশ দেশটিতে নেই; যা জনগণের স্বাধীন ও অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।’

আরও পড়ুন