দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারে আবার অভিযান, মই বেয়ে বাড়িতে ঢুকলেন তদন্তকারীরা

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলফাইল ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তারে তাঁর সিউলের বাড়িতে ঢুকেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইউনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। আগের মতো এবারও বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। তাই নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে মই বেয়ে বাড়ির প্রাঙ্গণে ঢুকেছেন তাঁরা।

দেশটির বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানায়, রাজধানী সিউলের মধ্যাঞ্চলে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মই বেয়ে ইউনের বাড়ির প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তবে বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তারের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ইউনকে গ্রেপ্তারে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের গতকালের প্রচেষ্টা প্রাথমিকভাবে রুখে দেন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনীর (প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস-পিএসএস) সদস্যরা। গাড়ি দিয়ে বাড়ির প্রবেশপথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। সে সময় সেখানে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল পিপল পাওয়ার পার্টির আইনপ্রণেতা ও ইউনের আইনজীবীরা ছিলেন বলে জানিয়েছে ইয়োনহাপ।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউনকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা রুখে দিতে তীব্র শীতের মধ্যে তাঁর বাড়ির সামনে হাজারো সমর্থক জড়ো হয়েছেন। মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপেক্ষা করে তাঁরা প্রতিবাদ জারি রেখেছেন। একই সঙ্গে সরকারবিরোধীরাও সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন।

সিউল থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানান, প্রেসিডেনশিয়াল আবাসে গতকাল সন্ধ্যার অভিযানে প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা দল আবার সতর্ক করে দিয়েছে যে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আইনি ভিত্তি নেই। তারা নিয়মিত নিরাপত্তা প্রটোকল মেনে চলবে। এর অর্থ হলো, অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউনকে রক্ষায় তারা যা যা করা দরকার, সেসব করবে। এখন যেমন তাঁর সরকারি আবাসের ভেতরে প্রতিবন্ধকতা বসানো হয়েছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে একবার ইউনকে গ্রেপ্তারের জন্য তাঁর বাড়িতে কয়েক ঘণ্টার অভিযান চালান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তবে তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীর বাধায় সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। এবার দ্বিতীয়বারের মতো অভিযান চালানো হচ্ছে।

প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান কিম সাং-হুনকে গ্রেপ্তার করার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিবিসিও এই খবর প্রচার করে। পরে পুলিশের বরাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কিমকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

সবাইকে হতবাক করে দিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছিলেন ইউন। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে মাত্র ছয় ঘণ্টার মাথায় তিনি তা প্রত্যাহারে বাধ্য হন।

স্বল্পস্থায়ী এই সামরিক আইন জারির জেরে ১৪ ডিসেম্বর ইউনকে দেশটির পার্লামেন্টে অভিশংসন করা হয়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শুরু হয় ফৌজদারি তদন্ত। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তলবে হাজির হতে ইউন অস্বীকৃতি জানান। এর জেরে ৩১ ডিসেম্বর ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালত।

ইউনের বিরুদ্ধে জারি করা ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ ৬ জানুয়ারি শেষ হয়। পরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ আদালত বাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।