শ্রীলঙ্কায় স্থানীয় নির্বাচনে দেরির দায়ে প্রেসিডেন্ট দোষী সাব্যস্ত
স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনে এক বছরের বেশি সময় দেরি করায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহকে ‘বেআইনি আচরণের’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন দেশটির শীর্ষ আদালত। আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেওয়া হয়। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হতো, রনিল দেশটির ভেঙে পড়া অর্থনীতি সামাল দিতে কতটা সক্ষম হয়েছেন।
তবে বিক্রমাসিংহে দায়িত্বে থাকাকালীন দায়মুক্তি পেয়েছেন। সে জন্য এই রায়ের তাৎক্ষণিক কোনো আইনি প্রভাব নেই। আগামী মাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৭৫ বছর বয়সী রনিল আবারও ৫ বছরের মেয়াদে ফিরে আসতে আগামী মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাঁর এই লড়াই খুব সহজ হবে না। কারণ তিনি ৩৮ জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের সবাই আজ একমত হন যে রনিল ২০২৩ সালের মার্চে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য অর্থ ছাড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তবে রনিলের প্রশাসনের ভাষ্য, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যে অর্থ দিল তা সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন, পেনশনে দরকার ছিল। যদিও নির্বাচন আয়োজনে অর্থ ছাড় করতে আদালতের আদেশ ছিল।
আদালত বলেন, স্থানীয় নির্বাচন ঠেকাতে রনিল ‘স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনি আচরণ’ সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। পাশাপাশি আদালত স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে নির্দেশ দিয়েছেন, তবে তাতে যেন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়।
একই সঙ্গে এই অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন স্থগিত করে যে চারজন আবেদন করেছেন, তাঁদের আইনি খরচ বহন করতেও রাষ্ট্রকে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
রনিল আগে পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে রাজাপক্ষে গোতাবায়ে অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্রে করে জনবিক্ষোভের মধ্যে পদত্যাগ করার পর রনিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নির্বাচিত হন।
দেশকে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় রনিল বিক্রমাসিংহে ২০২৩ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছেন। সে জন্য আয়কর দ্বিগুণ এবং জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধ করতে হয়েছে। এর জেরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।
স্থানীয় নির্বাচনটি হওয়ার কথা ছিল গত বছরের মার্চে। আইএমএফের ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে যেসব কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা জনগণ কীভাবে নিয়েছে, এই ভোটের মধ্য দিয়ে তা প্রতিফলিত হতো। বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ, রনিল গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে এই অর্থনৈতিক সংকটকে অজুহাত হিসেবে নিয়েছেন।