নেপালে জেন-জিদের বিক্ষোভে সমর্থন জানালেন তারকারা
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ করছে তরুণ প্রজন্ম। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সহিংসতায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন দেশটির প্রখ্যাত শিল্পী ও বিনোদনজগতের তারকারা।
অভিনেতা মদনকৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ ও হরিবংশ আচার্য ফেসবুকে প্রকাশ্যে বিক্ষোভকারীদের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁরা তরুণদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
আচার্য সম্প্রতি একটি বেহাল সড়ক নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন তুলে বলেন, করদাতাদের অর্থে নির্মিত অবকাঠামো কেন এত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
হরিবংশ আচার্য লিখেছেন, ‘আমি প্রতিদিনই দেখে বিস্মিত হতাম, সড়কটি কীভাবে এত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। আমি প্রতিদিন এই সড়কে হাঁটতাম, চিন্তা করতাম। তবে আজকের তরুণেরা শুধু চিন্তা করেন না—তাঁরা প্রশ্নও তোলেন। কেন সড়কটি নষ্ট হলো? কীভাবে এটা ঘটল? এর জন্য দায়ী কে? আজকের তরুণ প্রজন্ম যেসব প্রশ্ন তুলছেন, এটি শুধু তার একটি উদাহরণ। আজ আমরা যে কণ্ঠস্বর শুনছি, তা শুধু কোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়; বরং সেসব নেতা ও কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, যারা এর জন্য দায়ী।’
এ অভিনেতা নিজেদের কাজের মানোন্নয়ন করতে এবং দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখনকার তরুণসমাজ বেশি বেশি জবাবদিহি আশা করে।
মদনকৃষ্ণ শ্রেষ্ঠও একই মনোভাব ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘আমি দেশের কয়েকটি যুগ দেখেছি এবং নিজের চোখে লড়াই–সংগ্রাম দেখেছি। কণ্ঠস্বর দমন করা হয়েছে, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতার লোভ নিয়ন্ত্রণহীন রয়ে গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ বিদেশে কাজের জন্য যেতে বাধ্য হচ্ছে। দুর্নীতি উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে।’
শ্রেষ্ঠ বলেন, ‘তরুণেরাই দেশের ভবিষ্যৎ, আর তাঁদের স্বপ্ন নেপালের প্রতিচ্ছবি। বছরের পর বছর স্থবিরতা প্রতিটি নাগরিককে হতাশ করেছে। আজকের জেন–জি কথা বলছে। তাঁদের কণ্ঠস্বর শোনা জরুরি। দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এমন নেতৃত্ব দরকার, যাঁরা নাগরিকদের চাহিদা বোঝেন, আর জাতির আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে পারেন।’
গায়ক ও অভিনেতা প্রকাশ সাপুত দুই ভাই সুনীল ও শচীনকে বিক্ষোভে যোগ দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, গত মাসে ইউটিউব থেকে আয় হওয়া অর্থ থেকে দুই ভাইয়ের প্রত্যেকের জন্য ২৫ হাজার রুপি করে পাঠিয়েছেন। এই অর্থ দিয়ে তাঁদের পানি সরবরাহ করতে ও শরীর আর্দ্র রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে এবং একসঙ্গে সবকিছু করার চেষ্টা করে নিজেদের ক্লান্ত না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অভিনেতা ও পরিচালক নিশ্চল বসনেত টিকটকের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতা পেলে জনগণকে উপেক্ষা করেন এবং নাগরিকদের দমন করার আইন তৈরি করেন।
নিশ্চলের পর্যবেক্ষণ, এবার আগের মতো ব্যক্তিনির্ভর আন্দোলন নয়, নেপালের তরুণেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সক্রিয়ভাবে আওয়াজ তুলেছেন। বিক্ষোভ চলাকালে যেন কোনো অঘটন না ঘটে, সেদিকে নজর রাখতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অভিনেত্রী বর্ষা রাউত কাঠমান্ডুর বাইরে থাকলেও টিকটকের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বিক্ষোভে অংশ নিতে অন্যদের উৎসাহিত করেছেন।
অভিনেতা আনমল কে সি, প্রদীপ খদকা, ভোলারাজ সাপকোটা, বর্ষা শিবাকোটি এবং সংগীতশিল্পী এলিনা চৌহান, রচনা রিমাল ও সমীক্ষা অধিকারীও আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সবাইকে এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যান্য শিল্পীও প্রকাশ্যে বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন।