প্রথম কাগজে ছাপানো মুদ্রার প্রচলন কোন দেশে
দৈনন্দিন জীবনে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংক নোট বা কাগুজে মুদ্রার ব্যাপক ব্যবহার হয়। বিশ্বজুড়েই এ ধরনের মুদ্রার প্রচলন আছে। তবে প্রথম কোন দেশটি কাগুজে মুদ্রার প্রচলন করেছে, সেগুলো দেখতেই–বা কেমন ছিল?
বর্তমান সময়ে ব্যবহৃত ব্যাংক নোটের প্রথম অগ্রদূত ছিল ‘ফ্লাইং মানি’। চীনের তাং সাম্রাজ্যের (৬১৮ থেকে ৯০৭ খ্রিষ্টাব্দ) ধনী বণিক এবং সরকারি কর্মকর্তারা এগুলো ব্যবহার করতেন। সাধারণ জনগণের কাছে তা সহজলভ্য ছিল না।
তা ছাড়া এসব ফ্লাইং মানি ব্যবহার করে সরাসরি লেনদেন করা যেত না। এগুলো দলিল আকারে থাকত, যাকে বর্তমান সময়ে ব্যাংক ড্রাফটের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ব্যাংক ড্রাফটের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দেন এবং একটি রসিদ বুঝে নেন। পরে অন্য জায়গায় সে রসিদ দেখিয়ে একই পরিমাণ অর্থ ভাঙিয়ে নেন। সে একই পদ্ধতি ‘ফ্লাইং মানি’র ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হতো।
তাহলে সরাসরি লেনদেনের জন্য কাগজে মুদ্রার প্রচলন হলো কবে?
এখন পর্যন্ত জানা তথ্যমতে, পৃথিবীতে সরাসরি লেনদেন উপযোগী কাগুজে মুদ্রা প্রথম চালু হয় চীনে। দেশটির সং সাম্রাজ্যের সময়ে (৯৬০ থেকে ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দ) এ ধরনের মুদ্রার প্রচলন হয়। সম্রাট ঝেনজংয়ের শাসনামলে (৯৯৭ থেকে ১০২২ খ্রিষ্টাব্দ) সিচুয়ান প্রদেশের একদল বণিক মিলে প্রথম কাগজের মুদ্রা ছাপিয়েছিলেন। তখন কাগজে ছাপানো এসব মুদ্রাকে ডাকা হতো জিয়াওজি বলে। এ কাগজের মুদ্রাগুলো কয়েনের সঙ্গেও বিনিময়যোগ্য ছিল।
শুরুতেই চীনে কাগুজে মুদ্রা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে কয়েক দশক পর মূল্যস্ফীতি দেখা দিলে এ মুদ্রা মুখ থুবড়ে পড়ে। এর বদলে হুইজি নামে একধরনের নোটের প্রচলন হয়। সরকারের নিজস্ব ছাপাখানায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় এগুলো ছাপানো হতো।
প্রতিটি নোটের আকার ছিল এ ফোর আকারের কাগজের মতো। কাগুজে নোটগুলোর মূল্যমান হাতে লেখা ছিল। আসল কি না, তা নিশ্চিত করতে এগুলোতে লাল কালির একধরনের সিল মারা ছিল।
এখন আর পৃথিবীতে চীনের ওই আদিম কাগুজে মুদ্রার অস্তিত্ব নেই। শুধু ওই সব কাগুজে মুদ্রা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হতো, এমন একটি মুদ্রণ প্লেট উদ্ধার করতে পেরেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।