ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: হিমালয়ান পিংক সল্ট ব্যবসায়ীদের কী হবে

ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরের ব্যবসায়ী বিপান কুমার তিন দশক ধরে পাকিস্তান থেকে হিমালয়ান পিংক সল্ট এনে ভারতে বিক্রি করেন। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সর্বশেষ সংঘাতের পর চরম বিপদে পড়েছেন তিনি।

কারণ, ওই সংঘাতের পর নয়াদিল্লি পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে—এমনকি তৃতীয় দেশ হয়েও পাকিস্তানি পণ্য আমদানি করা যাবে না।

এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গুলি করে ২৬ পর্যটককে হত্যার পর সংঘাতে জড়ায় দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের অভিযোগ, ইসলামাবাদ সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়—পাকিস্তান সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সর্বশেষ সংঘাতে দুই দেশেই বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।

বিপান কুমারের বয়স ৫০ বছর। তিনি পাঞ্জাবের অমৃতসরে বসবাস করেন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, পাকিস্তানি পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে তাঁর ব্যবসা রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেছে।

অথচ বিপান সাধারণত প্রতি তিন মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টন পিংক সল্ট বিক্রি করতেন।

বিপান বলেন, ‘লাভের পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু প্রচুর পরিমাণে বিক্রির কারণে ব্যবসাটা টিকে ছিল। এখন নিষেধাজ্ঞার ফলে পিংক সল্টের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জানি না কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

বিপান কুমারের বয়স ৫০ বছর। তিনি পাঞ্জাবের অমৃতসরে বসবাস করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে তাঁর ব্যবসা রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়।

হালকা গোলাপি রঙের খনিজ লবণ ‘পিংক সল্ট’ নামে পরিচিত। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই লবণে লৌহের মতো খনিজ উপাদান থাকে, রান্না ছাড়াও ঘর সাজানোর বাতি এবং সৌন্দর্য চর্চায় ব্যাপকভাবে পিংক সল্টের ব্যবহার হয়।

পিংক সল্টের দ্বিতীয় বৃহৎ খনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত। সবচেয়ে বেশি পিংক সল্ট পাওয়া যায় কানাডার অন্টারিওর সিফটো সল্ট খনি থেকে। পাকিস্তানের খেওড়া লবণ খনিটি লাহোর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে।

এই খনি থেকে অপ্রক্রিয়াজাত লবণ ভারতে যায় এবং সেখানে লবণ প্রক্রিয়াজাত করে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। ভারতে সবচেয়ে বেশি পিংক সল্ট আমদানি হয় পাকিস্তান থেকে।

পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

পেহেলগাম হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই দেশ একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। চার দিন ধরে সীমান্তে এবং আকাশপথে লড়াইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।

যুদ্ধ উত্তেজনা হ্রাস পেলেও এর জেরে যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে। ভারতের লবণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় তাঁদের ব্যবসায় বিঘ্ন ঘটেছে, বাজারে লবণের দামও বাড়তে শুরু করেছে।

মাত্র এক মাস হলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, এর মধ্যেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। যাঁদের কাছে লবণের মজুত আছে, তাঁরা এখন সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করছেন।
...গুরভীন সিং, ভারতের অমৃতসরের লবণ ব্যবসায়ী

অমৃতসরের লবণ ব্যবসায়ী গুরভীন সিং বলেন, মাত্র এক মাস হলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, এর মধ্যেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। যাঁদের কাছে লবণের মজুত আছে, তাঁরা এখন সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করছেন।

লবণ আমদানি করতে না পেরে ভারতীয় আমদানিকারকেরা হায় হায় করলেও পাকিস্তানি রপ্তানিকারকেরা ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁরা বলেছেন, পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা তাঁদের রপ্তানির বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পাকিস্তানের লবণ নিজেদের নামে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন।

পিংক সল্টের দ্বিতীয় বৃহৎ খনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত। সবচেয়ে বেশি পিংক সল্ট পাওয়া যায় কানাডার অন্টারিওর সিফটো সল্ট মাইন থেকে। পাকিস্তানের খেওড়া লবণ খনিটি লাহোর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে।
আরও পড়ুন

করাচিভিত্তিক আরএম সল্টের কর্মকর্তা ফৈজান পাঞ্জওয়ানি বলেন, ‘সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা আমাদের ব্যবসা আরও বিস্তারে সহায়তা করবে। এর ফলে ভারতের সঙ্গে যে প্রতিযোগিতা, সেটা আর থাকছে না।’

পাকিস্তানের লবণের বড় বাজার ভারত—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই বলে মত এই কর্মকর্তার। তবে পাকিস্তান থেকে ভারতে অপ্রক্রিয়াজাত লবণ রপ্তানি হয়।

নিঃসন্দেহে, ভারত একটি বড় বাজার এবং সেখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা লবণ অপ্রক্রিয়াজাত অবস্থায় নয়, বরং মূল্য সংযোজন করে রপ্তানি করতে চাই। বিশ্বব্যাপী আগে থেকেই আমাদের লবণের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
...ফৈজান পাঞ্জওয়ানি, করাচিভিত্তিক আরএম সল্টের কর্মকর্তা

ফৈজান বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ভারত একটি বড় বাজার এবং এখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা লবণ অপ্রক্রিয়াজাত অবস্থায় নয়, বরং মূল্য সংযোজন করে রপ্তানি করতে চাই। বিশ্বব্যাপী আগে থেকেই আমাদের লবণের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’

২০১৯ সালে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমে গেছে। পুলওয়ামায় ওই হামলায় ৪০ সেনা নিহত হন।

আরও পড়ুন

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে—একই সময়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি করেছে মাত্র ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য।

২০২৪ সালে ভারত প্রায় ৬৪২ মেট্রিক টন পিংক সল্ট আমদানি করেছে। ২০১৮ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন—উচ্চ শুল্কের কারণে ২০১৯ সাল থেকে ভারতে পাকিস্তানের পণ্য আমদানি অনেক কমে গেছে।