সর্বদলীয় সরকার গঠনে এমপিদের রনিলের চিঠি

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে
ছবি: রয়টার্স

একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনে সংসদ সদস্যদের চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। খবর রয়টার্সের
কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কারের মাধ্যমে দেউলিয়া অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন বলে আজ রোববার তাঁর কার্যালয় জানিয়েছে।

আর্থিক দুর্দশার প্রতিবাদে বিক্ষোভের মুখে পূর্বসূরি গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশত্যাগ ও পদত্যাগের পর জুলাইয়ের শুরুতে প্রেসিডেন্টে হিসেবে শপথ নেন বিক্রমাসিংহে।
শনিবার ক্যানডি শহরে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উপাসনালয় টেম্পল অব দ্য টুথে প্রভাবশালী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে বৈঠকে রনিল এ পরিকল্পনার কথা জানান।

শপথ নেওয়ার পরে প্রভাবশালী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে প্রথমবার বৈঠকে রনিল বলেন, ‘একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আবার সব নতুন করে শুরু করতে চাই।’
প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমি সব দলকে একত্র করে সেই নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই এবং একই সঙ্গে সর্বদলীয় সরকারও গঠন করতে চাই।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আইনপ্রণেতাদের চিঠি পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহ।
শ্রীলঙ্কায় গণবিক্ষোভের মুখে বিরোধী দলের সাবেক একজন এমপি রনিল বিক্রমাসিংহে (৭৩) গত মে মাসে ষষ্ঠবারের মতো শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করার পর কেউ দায়িত্ব নিতে আগ্রহ না দেখানোয় প্রধানমন্ত্রী হন রনিল।

আর্থিক দুর্দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ৯ জুলাই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের ভবনে ঢুকে সেখানে অবস্থান নেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছেড়ে পালান গোতাবায়া রাজাপক্ষে। এরপর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান রনিল বিক্রমাসিংহে।

প্রেসিডেন্ট ভবন ছাড়ার পর দেশত্যাগ করেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। দেশ ছাড়ার পাঁচ দিন পর তিনি পদত্যাগ করেন। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান রনিল বিক্রমাসিংহে। এরপর পার্লামেন্টে সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
নজিরবিহীন মন্দার মুখে শ্রীলঙ্কা। দেশটির ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ কয়েক মাস ধরে খাদ্য ও জ্বালানি ঘাটতি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকা, ব্যাপক মূল্যস্ফীতির সঙ্গে জীবন যাপন করছে। এতে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভের মুখেই দেশ ছেড়ে পালানোর পরে পদত্যাগ করেন গোতাবায়া।

গত বছরের শেষ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত-সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। এমনকি খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপণ্য আমদানি করতে পারছিল না দেশটির সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া ঘোষণা করে সরকার। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে বৈঠকে বিক্রমাসিংহে বলেছেন, অর্থনীতির সংকট আরও বাড়বে। এ বছর অর্থনীতি আরও ৭ শতাংশ সংকুচিত হবে। দেশে এখন মূল্যস্ফীতি ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়তে পারে। অবশ্য পরের বছর থেকে অর্থনীতি আবার ইতিবাচক পথে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থনীতির পুনরুদ্ধার নিয়ে রনিল বলেছেন, ‘এটা খুবই কঠিন একটা কাজ। কিন্তু কাজটা এখন করা না হলে তা আরও কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের এখন এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা ওষুধ দেওয়ার মাধ্যমে রোগীকে সারিয়ে তুলব, নাকি ওষুধ না দিয়ে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেব।’