কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ থাইল্যান্ডের
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। তারা বলেছে, রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে একটি চুক্তি সত্ত্বেও ঘন জঙ্গলে ঢাকা সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ অব্যাহত আছে।
গতকাল সোমবার মালয়েশিয়ায় শান্তি আলোচনার পর থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া একটি শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। তখন বলা হয়েছিল, মধ্যরাত থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
৮০০ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) দীর্ঘ বিবাদপূর্ণ সীমান্তজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি প্রাচীন মন্দির ঘিরে এবার সংঘাতে জড়ায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।
৮০০ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) দীর্ঘ বিবাদপূর্ণ সীমান্তজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি প্রাচীন মন্দির ঘিরে এবার সংঘাতে জড়ায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।
থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র উইনথাই সুভারি বলেন, চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থাই সেনাবাহিনী লক্ষ্য করে কম্বোডিয়ার সেনারা থাইল্যান্ডের কয়েকটি এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। এটি চুক্তির ইচ্ছাকৃত লঙ্ঘন ও পারস্পরিক আস্থা দুর্বল করার একটি স্পষ্ট চেষ্টা। তিনি আরও বলেন, থাইল্যান্ড এর উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে। এটা তার আত্মরক্ষার আইনি অধিকার প্রয়োগের মধ্যে পড়ে।
এদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেয়তা জোর দিয়ে বলেন, কোনো এলাকায় (যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর) একে অপরের বিরুদ্ধে কোনো হামলা হয়নি।
চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থাই সেনাবাহিনী লক্ষ্য করে কম্বোডিয়ার সেনারা থাইল্যান্ডের কয়েকটি এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। এটি চুক্তির ইচ্ছাকৃত লঙ্ঘন ও পারস্পরিক আস্থা দুর্বল করার একটি স্পষ্ট চেষ্টা।
তবে উভয় পক্ষই বলেছে, যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে সীমান্ত অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের আঞ্চলিক কমান্ডারদের মধ্যে সকালে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা হয় ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে অথবা নির্ধারিত সময়ে শুরু হবে।
থাই সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কম্বোডিয়ার শহর সামরায়ং। সেখান থেকে এএফপির একজন সাংবাদিক বলেন, মধ্যরাতের আধা ঘণ্টা আগে থেকে বিস্ফোরণের শব্দ বন্ধ হয়ে যায়, ভোর পর্যন্ত তা আর শোনা যায়নি।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। তিনি লেখেন, ‘মধ্যরাত ১২টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে চার দিনের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘাতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় তিন লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
সংঘাতে যুদ্ধবিমান, রকেট ও কামানের মতো ভারী যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সপ্তাহান্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে চার দিনের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘাতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় তিন লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার খবর শোনার পর গতকাল সন্ধ্যায় কম্বোডিয়ার একটি মন্দির এলাকায় আশ্রয় নেওয়া ফিয়ান নেথ এএফপিকে বলেন, ‘এ খবর শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। কারণ, আমি আমার পেছনে ফেলে আসা বাড়ি ও অন্য সব কিছুর অভাব বোধ করছি।’
ফিয়ান নেথের বাড়ি সীমান্ত এলাকায়। ৪৫ বছর বয়সী এই কম্বোডিয়ান আরও বলেন, ‘আমি এতটা খুশি হয়েছি যে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’
শত বছরের বেশি পুরোনো সীমান্ত বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত শুরু হয়। তখন থেকেই সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছিল মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। সে ধারাবাহিকতায় গতকাল মালয়েশিয়ায় একটি যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়।
মধ্যরাত ১২টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে।
মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শহরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাসভবনে এ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন থাই ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। ছিলেন মালয়েশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাষ্ট্রদূতেরাও। আলোচনা শেষে আনোয়ার ইব্রাহিম ঘোষণা দেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘অবিলম্বে শর্তহীন’ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন।
সে সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার মালয়েশিয়ার সময় রাত ১২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। আর আজ মঙ্গলবার আবার আলোচনায় বসবে দুই দেশের সামরিক বাহিনী।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার (গতকাল) মালয়েশিয়ার সময় রাত ১২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
এ ছাড়া আলোচনা-পরবর্তী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সরাসরি যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।