আজারবাইজানে সিরিয়া ও ইসরায়েলি কর্মকর্তার বৈঠক

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা (বাঁয়ে) ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে, ১২ জুলাই ২০২৫ছবি: এএফপি

আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গত শনিবার সিরিয়া ও ইসরায়েলের দুজন কর্মকর্তা বৈঠক করেছেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার আজারবাইজান সফরের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দামেস্কের একটি কূটনৈতিক সূত্র এমনটাই জানিয়েছে।

এই বৈঠক দুই বৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, কয়েক দশক ধরে উভয় দেশ পরস্পরকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল। শারার সঙ্গে আল-কায়েদার অতীত সংশ্লিষ্টতার কারণে শুরুতে তাঁকে ‘জিহাদপন্থী’ আখ্যা দিয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে গত ডিসেম্বরে ক্ষমতা গ্রহণকারী শারার প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে দেশটি। সেই ধারাবাহিকতায় বাকুদে দুই দেশের দুই কর্মকর্তা বৈঠক করলেন।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল আজারবাইজানের অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। ককেশাস অঞ্চলের (ইউরেশিয়ার) এই দেশের সঙ্গে তাদের বেশ ভালো কূটনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। ইসরায়েলের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত ইরানের সঙ্গে আজারবাইজানের সীমান্ত রয়েছে।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শারা নিজে বাকুতে অনুষ্ঠিত সিরিয়া ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বৈঠকে অংশ নেননি। দামেস্কের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ‘সিরিয়ায় নতুন করে ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন’ নিয়েই মূলত এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

শারাদের নেতৃত্বে রাজধানী দামেস্ক অভিমুখে লংমার্চের মুখে গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতন হয়। এর পরপরই সিরিয়ার অভ্যন্তরে শতাধিক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। শারার নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থী অন্তর্বর্তী প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পদ ধ্বংস করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

বাশারের পতনের পরপরেই ইসরায়েল সিরিয়ার গোলান মালভূমির জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত বাফার জোনে সেনা মোতায়েন করে। যেখান থেকে তারা দক্ষিণ সিরিয়ার আরও ভেতরে অভিযান চালিয়েছে। এই অঞ্চলটি আগে সিরিয়া ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে একটি কৌশলগত নিরাপত্তা সীমা হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

শারা বারবার বলে এসেছেন, সিরিয়া তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে কোনো সংঘাতে যেতে চায় না। বরং সিরিয়ায় হামলা বন্ধে ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরি করতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শারার সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা ১৯৭৪ সালের নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে ফেরার লক্ষ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগ শুরু করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমেই দুই দেশের মধ্যে বাফার জোনটি তৈরি হয়েছিল।

গত মাসের শেষ দিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার বলেছিলেন, ইসরায়েল সিরিয়ার সঙ্গে শান্তি ও স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি করতে আগ্রহী।

গিদিওন সারের মন্তব্যের জবাবে তখন সিরিয়া সরকারের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই ধরনের আলোচনার সময় এখনো আসেনি।

কিন্তু চলতি সপ্তাহে লেবানন সফরের সময় সিরিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম বারাক বলেন, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সংলাপ শুরু হয়েছে।

গত মে মাসে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি আশা করেন সিরিয়া অন্যান্য আরব দেশের মতো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে।

ট্রাম্পের ভাষায়, ‘(শারা) হ্যাঁ বলেছেন। তবে (এ জন্য) তাঁদের অনেক কাজ করতে হবে।’

বাকু সফরে শারা আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্টের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা তুরস্কের মাধ্যমে সিরিয়ায় গ্যাস রপ্তানি শুরু করবে। তুরস্ক উভয় দেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র।