চীন-নেপাল সম্পর্কে নতুন গতি, ৭ সমঝোতা স্মারকসহ ১২ চুক্তি সই

নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলের চীন সফরকালে ৭টি সমঝোতা স্মারকসহ ১২টি চুক্তি সই।

লি কিয়াং ও পুষ্প কমল দহল

বাণিজ্য, সড়ক সংযোগসহ বিভিন্ন খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে ৭টি সমঝোতা স্মারকসহ (এমওইউ) ১২টি চুক্তি সই করেছে চীন ও নেপাল। গত সোমবার বেইজিংয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এসব চুক্তি সই হয়।

বেইজিংয়ে নেপাল দূতাবাস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তৃতভাবে পর্যালোচনা করেন। দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা আরও জোরদার ও সুসংহত করার উপায় নিয়ে মতবিনিময় করেছে দুই দেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে গতি সঞ্চারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর হাংজুতে এশিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে গত শনিবার এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ফাঁকে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন পুষ্প কমল।

দেশের রাজনীতিতে কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন পুষ্প কমল। গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম চীন সফরে গেলেন তিনি। এর আগে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন পুষ্প কমল।

নেপালের দূতাবাস জানায়, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর সমঝোতা স্মারকসহ ১২টি চুক্তি সই হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল অর্থনীতি এবং কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতায় সমঝোতা স্মারক। নেপাল-চীন বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেন চুক্তি পর্যালোচনা ও যুগোপযোগী করতে একটি যৌথ কারিগরি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনেও একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

হিলসা-সিমকট সড়ক প্রকল্প নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সড়কটি উত্তর-পশ্চিম নেপালকে সীমান্তবর্তী তিব্বতের সঙ্গে যুক্ত করবে। নেপাল-চীন বিদ্যুৎ গ্রিড নিয়েও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে অন্য চুক্তিগুলো সই হয়েছে।

চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান ঝাও লেজির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন পুষ্প কমল। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে নিউইয়র্ক থেকে সরাসরি চীন সফরে যান তিনি।

জিডিআইয়ে সমর্থন

কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুষ্প কমলের সফর নিয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করেছে তাঁর দপ্তর। এতে বলা হয়েছে, চীনের প্রস্তাবিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের (জিডিআই) প্রতি সমর্থন রয়েছে নেপালের। দেশটি ‘ফ্রেন্ডস অব জিডিআই’ ফোরামে যুক্ত হওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

জিডিআই কার্যকরে চীন ‘ফ্রেন্ডস অব জিডিআই’ নামে একটি ফোরাম গঠন করেছে। এতে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক দেশ যুক্ত হয়েছে। এসব দেশের অধিকাংশই এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার।

যৌথ ঘোষণায় ‘এক চীন নীতির’ প্রতি নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে নেপাল। দেশটি ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার’ বিপক্ষে বলে বেইজিংকে আশ্বস্ত করেছে কাঠমান্ডু। একই সঙ্গে তিব্বতকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় আখ্যা দিয়ে নেপালের মাটি বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে না দেওয়ার অঙ্গীকার কাঠমান্ডু পুনর্ব্যক্ত করেছে।

যৌথ ঘোষণায় চীন বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সুবিধা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার নীতির প্রতি দেশটির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

যৌথ ঘোষণার আরও বলা হয়, নেপালের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে চীন। একই সঙ্গে নেপালের জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই সামাজিক ব্যবস্থা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার স্বতন্ত্র পছন্দকেও সম্মান ও সমর্থন করে বেইজিং।

চীন ও নেপালের ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত হাট চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ সীমান্ত পরিদর্শনের বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে।

নেপালকে স্থলবেষ্টিত দেশ থেকে স্থল-সংযুক্ত দেশে পরিণত করতে চীনের ট্রানজিট পরিবহন ও মহাসড়ক ব্যবহার নিয়ে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার বিষয়েও সম্মত হয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশ।