ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ছবি: রয়টার্স

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্য নিয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউক্রেন অবশ্য জি-২০-এর সদস্য নয়। তবে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন।

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির যোগ দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কারণ, সম্মেলনে পুতিনের অংশগ্রহণের ঘোরবিরোধী পশ্চিমা দেশগুলো। তবে সম্মেলনের আয়োজক দেশের প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, পুতিন সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও আসছেন। শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

নভেম্বরে বালিতে ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের জোট জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে পুতিনকে ওই সম্মেলনে আসা ঠেকাতে পশ্চিমা দেশগুলো প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করে। এই যুদ্ধ রাশিয়া ও চীনকে আরও কাছাকাছি এনেছে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল উত্তেজনার মধ্যে সিও সম্মেলনে থাকার কথা নিশ্চিত করলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট।

ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তিনি পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা এবং তাইওয়ান নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনার পর এটিই হবে প্রথম কোনো বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় চীন। এরপর এই প্রথম চীনের বাইরে যাচ্ছেন সি। ওই সময়ের পর কেবল গত ১ জুলাই হংকংয়ের চীনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ২৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনে মূল ভূখণ্ডের বাইরে যান সি। এদিকে ইউক্রেন আক্রমণের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন পুতিন। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পুতিন শুধু ইরান সফরে গেছেন, গত জুলাইয়ে। এখন তিনি বৈশ্বিক সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জোকো উইদোদো বলেন, ‘সি চিন পিং (সম্মেলনে) আসবেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনও আসবেন বলে আমাকে বলেছেন।’

ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা গত জুন মাসে বলেছিলেন, পুতিন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের আয়োজিত সম্মেলনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। করোনা মহামারির কোনো বাধা তৈরি না হলে তিনি সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে জি-২০–এর প্রেসিডেন্ট। তাই বর্তমান বৈশ্বিক ঘটনাবলির কেন্দ্রস্থল হতে যাচ্ছে জাকার্তা। ইউরোপে যুদ্ধ থেকে শুরু করে তাইওয়ান প্রণালির উত্তেজনার মতো বিষয়গুলো নিয়ে এখানে আলোচনা হতে পারে।

সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য পুতিনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, এমন খবর গত এপ্রিল প্রকাশিত হওয়ার পর পুতিনকে সম্মেলন থেকে বাদ দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে ইন্দোনেশিয়াকে চাপ প্রয়োগ করা হয়।

তবে ইন্দোনেশিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে চলছে। কয়েক মাস ধরে চলা সংঘাত শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের জন্য দেশটি আহ্বান জানিয়ে আসছে। জুনে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো কিয়েভের পাশাপাশি মস্কো সফর করেন। তিনি যুদ্ধ বন্ধ ও বৈশ্বিক খাদ্যসংকট সমাধানের আহ্বান জানান।

উইদোদোর বক্তব্যের পর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র টেইকু ফাইজাসাহ এএফপিকে বলেন, রাশিয়া ও চীন আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছে। তারা অংশগ্রহণ করবে।

এর আগে গত মাসে রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক সের্গেই লাভরভ জি-২০–এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক বর্জন করেন। ওই বৈঠকে ইউক্রেনে সামরিক হামলার নিন্দা জানানো হয়েছিল।

মানবাধিকার, বাণিজ্য ও অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়েছে। স্বশাসিত তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করে থাকে চীন। পেলোসির সফরের প্রতিবাদে দ্বীপটিকে ঘিরে সাম্প্রতিককালের নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালিয়েছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্র এ মহড়ার নিন্দা জানিয়েছে। এ মহড়াকে তাইওয়ান দখলের অনুশীলন আখ্যা দিয়ে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছে তাইপে। এর আগে ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার জি-২০ সদস্যপদ কেড়ে নিতে এবং এ সম্মেলনে পুতিনকে আমন্ত্রণ না জানানোর আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইতিমধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তিপ্রক্রিয়ার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে ইন্দোনেশিয়া।

আরও পড়ুন

জোটে বিভক্তি, যৌথ ঘোষণা ছাড়াই শেষ হলো জি–২০ সম্মেলন