অন্তর্বর্তী সরকার-সংবিধান সংশোধন: জেন-জিদের বিক্ষোভের পর নেপালের সামনে কী
নেপালে তরুণদের যে বিক্ষোভ হলো, তা নজিরবিহীন। মাত্র দুই দিনের বিক্ষোভে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই দুই দিনে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গা ঢাকা দিয়েছেন অনেক রাজনীতিক। এর জেরে দেশটিতে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। প্রশ্ন উঠেছে—নেপালের জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে?
নেপালে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা সামলাতে ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের’ ঘোষণা দিয়েছে সেনাবাহিনী। সমাধানের একটি পথ খুঁজে বের করতে বিক্ষোভকারী ‘জেন-জি’ বা তরুণদের সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান। তবে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই জেন-জিদের একক কোনো নেতা নেই। ফলে তাঁদের হয়ে কে সংলাপের নেতৃত্ব দেবেন, তা পরিষ্কার নয়।
নেপালের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি বলরাম কে সি বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়টি সমাধানে আলোচনার জন্য জেন-জিদের এখন একটি প্রতিনিধিদল গঠন করতে হবে। ওই দলসহ সেনাবাহিনী ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পদত্যাগের পর তরুণদের এমন আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই।
নেপালে বর্তমানে কোনো প্রধানমন্ত্রী নেই। এটিও একটি রাজনৈতিক সংকট। নেপালের ২০১৫ সালের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের একজন সদস্যকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিতে হবে। যদি কোনো দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকে, তাহলে প্রেসিডেন্ট একজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবেন। ওই সদস্যকে অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে আস্থা ভোটে জয় পেতে হবে।
ওই সদস্য জয় না পেলে, পার্লামেন্টের যেকোনো সদস্য প্রধানমন্ত্রী হতে আস্থা ভোটের আহ্বান করতে পারেন। তিনিও না জয় পেলে পার্লামেন্টে ভেঙে যাবে এবং নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তবে এখন নেপালের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বিক্ষোভকারীদের আস্থা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীরা সাংবিধানিক এই প্রক্রিয়া মেনে নেবেন কি না, তা আপাতত স্পষ্ট নয়।
আরেকটি বিষয় হলো, রাজনৈতিক সংকট কাটাতে নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন সম্ভব কি না? সংবিধানে এ বিষয়ে কিছু বলা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের বিধিগুলো সাময়িক সময়ের জন্য এড়িয়ে এমন একটি সরকার গঠন করা যেতে পারে, যেখানে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। নেপালের সংবিধানবিশেষজ্ঞ বিপিন অধিকারী বলেন, ‘জেন-জিরা যে পরিবর্তন চান, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে ওই সরকার। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সমাজের সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব যেন ওই সরকারে থাকে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে জেন-জিরা সম্ভবত ৩৫ বছর বয়সী বলেন্দ্র শাহকে বেছে নিতে পারেন। তিনি একজন র্যাপার ও সুরকার। ২০২২ সালের রাজধানী কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রবি লামিচানেরও। সাবেক টেলিভিশন সাংবাদিক তিনি। ২০২২ সালে রাজনীতি নামেন রবি। তাঁর রাজনৈতিক দলের নাম রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি।
নেপালে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয় ২০১৫ সালে। তখন এ সংবিধান নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। নেপালের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, সংবিধানে সংশোধনও আনতে চান বিক্ষোভকারীরা। বর্তমান সংবিধানে সংশোধনের বিষয়টি রয়েছে। তবে কোনো সংশোধনের জন্য অবশ্যই পার্লামেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে।