জাপানে একাকিত্ব দূর করছে ‘অবতার’ রোবট

ক্যাফেতে রোবটের সঙ্গে কথা বলছেন এক গ্রাহক। ভিডিও থেকে নেওয়া
ডয়চে ভেলে

রোবট কি মানুষের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) এই যুগে প্রশ্নটি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। জাপানে একটি ক্যাফেতে রোবটকে কাজে লাগিয়ে মানুষের একাকিত্ব দূর করার এক অভিনব প্রকল্প অনেকের নজর কাড়ছে।

জাপানের রাজধানী টোকিওর ‘ডন ক্যাফে’ দেখতে সাধারণ রেস্তোরাঁর মতোই। কিন্তু কফি প্রস্তুতকারক ও পরিচারকদের পাশাপাশি সেখানে রোবটও কাজ করে। কয়েকটি রোবট চেয়ারে বসে অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করে। কয়েকটি আবার গ্রাহকের ফরমাশ করা খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত থাকে।

রেস্তোরাঁর অতিথিরা রোবটগুলোর সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে চান। মানুষের মতো দেখতে এসব অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রমানবের একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এগুলোর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কোনো প্রযুক্তি নেই। এই রোবট আসলে এমন মানুষের অবতার, যাঁরা দূর থেকে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন।

রোবটের চোখে বসানো ক্যামেরা, স্পিকার ও মাইক্রোফোনের কল্যাণে তথাকথিত পাইলটরা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এই পাইলটরা শুধু বাসা অথবা হাসপাতালের ঘর থেকে কাজ করতে পারেন।

এই পাইলটদের একজন হচ্ছেন মায়া। একটি ক্রনিক রোগের কারণে তাঁকে এখন হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। ২৪ বছর বয়সী এই নারীর কাছে কোনো চাকরি না পাওয়া অত্যন্ত কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল। ডন ক্যাফেতে কাজ পেয়ে তাঁর জীবনটা বদলে গেল। নিজের অতীত তুলে ধরে মায়া বলেন, ‘আমি অনেক চাকরির আবেদন করেছি।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর কোনো সুযোগ পাইনি। তখন খুব দুঃখ লাগছিল, অবসাদে ভুগছিলাম। ভেবেছিলাম, কোনো দিন কাজ করতে পারব না। তখনই পাইলটের এই চাকরির খবর পেলাম। এটা সত্যি অসাধারণ। আমার কাছে এটা ছিল শেষ আশার আলো। অতিথিদের মনোরঞ্জন হলে পরেরবারও দেখা হবে কি না, এমন প্রশ্ন শুনলে আজ আমি কৃতজ্ঞ বোধ করি। আমি মানুষকে কোনোভাবে সাহায্য করছি, সেটা জানতে পেরে আমার খুব আনন্দ হয়।’

ক্যাফেতে গ্রাহকের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছে রোবট। ভিডিও থেকে নেওয়া
সৌজন্যে ডয়চে ভেলে

এ প্রকল্পের উদ্যোক্তা ইয়োশিফুজি কেন্তারো। তিনি অরি ল্যাবরেটরি নামের কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার। এই প্রতিষ্ঠান ক্যাফের ওরিহিমে রোবট তৈরি করে। ছোটবেলা থেকেই ইয়োশিফুজি একাকিত্বের সমস্যায় ভুগতেন। স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে অনেক বছর তিনি স্কুলে যেতে পারেননি।

কেন্তারো বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর আমি স্কুলে যেতে পারিনি। সব সময় মনে হতো, অন্য একটা শরীর পেলে কী ভালোই না হতো! কারণ, চোট পেলে বা হাসপাতালে ভর্তি হলেও অন্য একটি শরীরের কল্যাণে সামাজিক জীবনে অংশ নিতে পারতাম।’

রোবট কি মানুষের চাকরি খেয়ে ফেলছে? কেন্তারো ইয়োশিফুজি নতুন প্রযুক্তির সামাজিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কাজে লাগিয়ে আমাদের কাজ আরও দক্ষভাবে করতে চাই। তবে আমরা কর্মীর সংখ্যা কমাতে চাই না। বরং শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে বা শরীর নড়াচড়া না করতে পারলেও যাতে আমরা কাজের জায়গা পেতে পারি, সেটাই হলো লক্ষ্য।’

রেই এই প্রথম ডন ক্যাফেতে এসেছেন। এখানকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। কোনো প্রত্যাশাও ছিল না। কিন্তু তাঁর দ্রুত রোবটের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস হয়ে গেছে।

রেই বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা দারুণ প্রকল্প। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এটিকে একটা সূচনার জায়গা হিসেবে আমরা কাজে লাগাতে পারি। মানুষ ও রোবটের মধ্যে যে সংযোগ তৈরি হয়েছে, তা সত্যি হৃদয় ভরিয়ে দেয়।’