শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভকারীদের শুক্রবারের মধ্যে স্থান ছাড়ার নির্দেশ

কলম্বোর গল ফেস গ্রিন এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হয়েছেনছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের কলম্বোর গল ফেস গ্রিন এলাকা থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। গত এপ্রিল মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এখন বিক্ষোভকারীরা বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেরও পদত্যাগ দাবি করছেন। বিক্ষোভকারীরা সেখানে দীর্ঘদিন থেকে তাঁবু গেড়ে রয়েছেন এবং তাঁরা সেখানে মাটিতে চারা রোপণ করছেন।

গতকাল বুধবার পুলিশ দ্রুত বিক্ষোভকারীদের ফেস গ্রিন এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ফোর্ট পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভকারীর অবৈধভাবে গল ফেস গ্রিন এলাকাসহ আশপাশের এলাকা দখল করেছে। তাদের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে বিক্ষোভস্থল ছাড়তে হবে।

শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর জানায়, ফোর্ট পুলিশের গণমাধ্যম শাখা থেকে বিক্ষোভকারীদের জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভকারীরা সরকার বা আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন ও চারা লাগাচ্ছেন। শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে ওই স্থান ছেড়ে না গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সিলন টুডে জানিয়েছে, গতকাল কলম্বো ফোর্ট পুলিশ সিলন টিচার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জোসেফ স্টালিনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে এ মাস থেকেই বেল আউট (অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সহায়তা) নিয়ে আলোচনা শুরু করা হবে। গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে সর্বদলীয় সরকার গঠনে আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তিনি এসব কথা বলেন।

শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমাতে সংবিধানিক সংশোধনী প্রয়োজন।’ এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ক্ষমতা কমানোর দাবি নিয়ে রাজপথে নামেন বিক্ষোভকারীরা। এর জের ধরে গোতাবায়া দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
রনিল বলেন, ‘দেশের প্রেসিডেন্টকে সাধারণ জনগণের ওপর উঠে রাজা বা ঈশ্বর হওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি দেশের একজন নাগরিক।’

২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দ্বীপরাষ্ট্রটি ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে বাজে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বনিম্ন অবস্থায় চলে গেছে। করোনা মহামারিতে দেশটির অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমাগত স্বল্পতার কারণে গত জুলাই মাসের শুরু থেকে মানুষ ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভের মুখে দেশ ছাড়েন গোতাবায়া। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিক্রমাসিংহে। পরে গোতাবায়া ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন। পার্লামেন্টের ভোটে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে বিক্রমাসিংহে আরও বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে চার বছর মেয়াদি কর্মসূচির আওতায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা নিয়ে চলতি মাসেই আলোচনা শুরু হতে পারে। সরকার আর্থিক ও আইন উপদেষ্টা ল্যাজার্ড এবং ক্লিফোর্ড চান্সকে নিয়ে বিদেশি ঋণ পুনর্গঠন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে কাজ করছে। আমরা এই পরিকল্পনা আইএমএফকে জমা দেব। অদূর ভবিষ্যতে ঋণসহায়তা প্রদানকারী দেশগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। পরে ব্যক্তিগত ঋণদাতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা হবে।’

শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহের দলের মাত্র একটি আসন থাকলেও গত মাসে ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে রাজাপক্ষের পরিবারের আধিপত্য থাকা সংসদ সদস্যদের ভোটে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। নতুন প্রেসিডেন্ট ঐক্যের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, তিনি কয়েকটি দলের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধার সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলাম। দেশের স্বার্থে অতীতকে এক পাশে রেখে একসঙ্গে আসতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ বিরোধী আইনপ্রণেতা হার্শ ডি সিলভা প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছেন।